পরিচালকঃ ক্লিন্ট ইষ্টউড
অভিনয়েঃ শন পেন, টিম রবিন্স, কেভিন বেকন
IMDB : 8.0

We bury our sins, we wash them clean.

জার্মানিতে একটা কথা প্রচলিত আছে; "প্রতিশোধের নেশা অনেক সময় একটা সাধারন সত্যিকেও অনেক বড় মিথ্যাতে পরিনত করতে পারে"। অবাধ পাপ, ব্যাথা ও রাগ জীবনে সবচাইতে বড় দূর্ভোগ বয়ে আনে। রূপালি পর্দাতে প্রতিহিংসা বা নিয়ন্ত্রনহীন ভুল সিদ্ধান্ত নতুন কোনো বিষয় না; তবে ওয়েষ্টার্ন মুভির জীবন্ত কিংবদন্তী ক্লিন্ট ইষ্টউড পরিচালিত "মিষ্টিক রিভার" এই বিষয়ে অন্য মুভিগুলোকে নিঃসন্দেহে হার মানিয়েছে। এক অর্থে বলা যায় মিষ্টিক রিভারের প্রতিটি চরিত্র এলিজাবেথান পিরিয়ডের নাটকের মত ভাগ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত; অন্য অর্থে তারা একচক্ষু বিশিষ্ট পাখির মত যারা শূধু যেদিকটা চোখে পড়ে সেদিকেই ওরার চেষ্টা করে। ডেনিস লেহ্যান এর বেস্ট সেলার বই অবলম্বনে করা "মিষ্টিক রিভার" মুভির চিত্রনাট্য ব্রায়ান হেলগেল্যান্ড অসাধারনভাবে তৈরী করেছেন; সাথে ক্লিন্ট ইষ্টউডের নির্দেশনা আর শন পেন, টিম রবিন্স, কেভিন বেকনদের উপস্থিতি... যতটা আশা নিয়ে বসেছিলাম তার চাইতে বেশী পূরণ হয়েছে বলব। ২০০৩ সালের মুভি মিষ্টিক রিভার; টিম রবিন্স তার "শশাঙ্ক রিডেম্পসন"র জন্য ততদিনে বিখ্যাত আর শন পেন "আই এ্যাম স্যাম" মুভির জন্য খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করছেন। এই মুভিতে সত্যি কথা বলতে দুইজন মিলে ইতিহাসই সৃষ্টি করে ফেলেছেন। কি করেছেন তারা? ১৯৫৯ সালের পর একমাত্র মুভি এই "মিষ্টিক রিভার" যেখানে শন পেন সেরা অভিনেতা এবং টিম রবিন্স সেরা সহ অভিনেতা হিসেবে অস্কার জয় করেন। সেরা মুভি বা সেরা ডিরেক্টর হিসেবেও হয়ত পেতে পারত; কিন্তু কি করবে... "লর্ড অব দ্য রিংস" এর সাথে লড়তে হয়েছে যে!!

ভাগ্য কখন মানুষকে ছেড়ে যায়? অথবা নিয়তি কখন খুব বেশী নির্মম হয়ে ধরা দেয়? যুক্তি, বুদ্ধি, পরামর্শ বা বিবেক মাঝে মাঝে বড্ড মূল্যহীন হয়ে পড়ে। চলুন সামান্য একটু চোখ বুলিয়ে আসি মুভির কাহিনী থেকে। জিমি, ডেভ আর সন নামের তিন বন্ধুর রাস্তার পাশে কাচা সিমেন্টে নাম লেখা দিয়ে কাহিনী শুরু। ডেভ হঠাৎ করেই ভায়াবহ ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। এরপরই কাহিনী ২৫ বছর পার হয়ে যায়। সবাই নিজ নিজ প্রফেশনে; ডেভ ভুলতে পারে না তার ছোটবেলার নির্যাতনের কথা। মাঝে মাঝে তাকে এটা পাগল করে ফেলে। এরই মাঝে খুন হয় জিমির মেয়ে, দায়িত্ব এসে পড়ে সন এর কাধে। প্রকৃতির খেয়ালের বশেই তিনজন আবার একত্রিত হয়। কিন্তু জিমির মেয়ের খুনি কে? ট্যুইষ্ট, ট্যুইষ্ট আর ট্যুইষ্ট এ পূর্ণ মুভি "মিষ্টিক রিভার"।  জানি না কেনো, আমার কাছে কিছুটা "প্রিজনার্স" মুভির মত লেগেছিলো এই অংশটা দেখার সময়।

"মিষ্টিক রিভার"কে আমরা ট্র্যাজেডি বলতে পারি। একটা সফল ট্র্যাজেডি তার শক্তি সঞ্চয় করে দর্শককে কিছু দুঃখ, কিছুটা ভাগ্যের খেলা আর কিছু চমক দিয়ে যা মানুষের মনে স্বভাবতই আঘাত করবে। এই দিক থেকে ইষ্টউড শতভাগ সফল হয়েছেন বলা চলে। চমকের পর চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি। এইরকম ট্যুইষ্টপূর্ণ মুভিগুলোতে সাধারনত কিছুটা আন্দাজ করা যায় যে প্রকৃত খুনি কে; কিন্তু এই একটা মুভি যেখানে আমি সম্পূর্ণ ব্যার্থ হয়েছি। শন পেন বাবার ভূমিকাতে অসাধারন অভিনয় করেছেন; আর টিম রবিন্স এর অভিনয় নিয়ে কথা বলার প্রশ্নই ওঠে না। আর একটা কথা, মুভির নামকরনের সার্থকতা আগেই খুজতে যাবেন না; শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। পার্ফেক্ট ক্রাইম থ্রিলার মুভিগুলোর মধ্যে "মিষ্টিক রিভার"কে আমি সবসময় সেরা পাঁচের মধ্যেই রাখব। "দ্যা সান" পত্রিকার মতে এটা কিন্তু ইষ্টউডের সেরা পরিচালিত মুভি। সুতরাং যারা দেখেননি; আর দেরি করবেন না। জলদি দেখে ফেলুন গত দশকের অন্যতম সেরা এই মাষ্টারপিস।

 
“There, peeping among the cloud-wrack above a dark tower high up in the mountains, Sam saw a white star twinkle for a while. The beauty of it smote his heart, as he looked up out of the forsaken land, and hope returned to him. For like a shaft, clear and cold, the thought pierced him that in the end the Shadow was only a small and passing thing: there was light and high beauty for ever beyond its reach.”

আমার সবচাইতে প্রিয় মুভি কি? কেউ যখন’ই এমন প্রশ্ন করে কোনো কিছু না ভেবেই উত্তর দেই “লর্ড অব দ্য রিংগস” ট্রিলজি। এতবার দেখেছি এই মুভির তিনটা পর্ব যে সাবটাইটেল সহ মুখস্থ হয়ে গেছে বলা চলে। এই মহাকাব্যিক উপন্যাস এবং চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলা বড্ড বেশী স্পর্ধা দেখানো হয়ে যায়; যাই লিখি না কেন, পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, “লর্ড অব দ্য রিংগস” ট্রিলজি আমার দেখা শ্রেষ্ঠ মুভি। তবুও মূল উপন্যাস পরার পরে কোথায় যেন একটা আক্ষেপ থেকে যায়; মনে হয়  আরো সুন্দর হতে পারত। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে, বারশ ষোল পৃষ্টার একটা উপন্যাস কে সাতশ ছাব্বিশ মিনিটে (ডিরেক্টরস্‌ কাট) দৃশ্যায়ন করা কম কথা না। জন রোনাল্ড রুয়েল টলকিন (JRR. Tolkin) তার জীবনের সমস্ত মেধা ঢেলে দিয়েছেন উপন্যাস রচনার জন্য; ঠিক একইভাবে পিটার জ্যাকশান মিডল আর্থের এই রুপকথার জগৎকে সৃষ্টি করেছেন যেন সমস্থ কল্পনাকে মিশিয়ে। আট বছর ধরে শুটিং, তাও তিনটা পার্ট একই সাথে। পরিচালক নিজের স্বপ্নকে শুধু সফল’ই করেননি; ইতিহাসে পরিনত করেছেন। এই জন্যে হয়ত স্ক্রিপ্টে তিনি লিখেছিলেন “History became legend, and legend became myth”.

টলকিন উইথ হিজ এপিক ফ্যান্টাসিঃ

ইংরেজ কবি টলকিন ব্যাক্তিগত জীবনে একজন ভাষাতাত্ত্বিক ছিলেন; বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকতা করেন বহুবছর। মূলত এ্যাংলো-স্যাক্সন ভাষা নিয়ে কাজ করেন তিনি এবং পরে ইংরেজি লিটারেচার নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরেন। শখের বসে লেখালেখি; তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি তার "হবিট" উপন্যাসের জন্যে। ভাবতে অবাক লাগে যে মানুষ এত কল্পনা মিশিয়ে গল্প লিখতেন তিনি'ই কি না প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ আর্মির পক্ষে অস্ত্র হাতে তুলে নেন। ২০০৮ সালে 'টাইম' ম্যাগাজিন সেরা ৫০ ইংরেজি লেখকদের মধ্যে ৬ষ্ঠ অবস্থানে রাখে টলকিন কে। তিনি একজন নাইট উপাধি প্রাপ্ত লেখক; যদিও স্যার বলে ডাকা তিনি মোটেও পছন্দ করেন নি। “লর্ড অব দ্য রিংগস” মূলত "হবিট" এর সিক্যুয়েল। উপন্যাস না বলে মিথ বা মহাকাব্য বলা ভালো। সম্পূর্ণ উপন্যাস ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে লেখা, একটু একটু করে অনেক বিশাল আকৃতি পায়। মুভির মত উপন্যাস'ও কিন্তু তিন খন্ডে প্রকাশিত হবার কথা ছিলো। যদিও প্রথমে তিনি চেয়েছিলেন একখন্ডে সমাপ্ত করতে, কিন্তু মধ্য যুগ তাকে এমন নেশাতে নিয়ে যায় যে আলাদা একটা জগৎ সৃষ্টি করে ফেলেন তিনি। লেখা শেষ হবার পরে আরেক যন্ত্রনা; যুদ্ধের ফলে কাগজের অভাব। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয় এক সাথে তিনখন্ড। সৃজনশীলতা আর কল্পনা শক্তির বিস্ময়কর মিশেল “লর্ড অব দ্য রিংগস”। চার্লস ডিকেন্স এর "আ টেল অব টু সিটিজ" এর পরে সবচাইতে বেশী বিক্রিত বই এটি। "হবিট" এর অবস্থান ৬ষ্ট।  


পিটার জ্যাকসন এ্যান্ড হিজ লং জার্নি টু হিজ ড্রিম প্রজেক্টঃ

নিউজল্যান্ড; অনেকের কাছেই স্বপ্নের দেশ। কিন্তু পিটার এর কাছে যেন আরো বেশি কিছু। তার জন্মভূমিকেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন তার স্বপ্নকে পূরন করার জন্য। প্রায় ২৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেটের হলিউডের ইতিহাসে অন্যতম সেরা প্রজেক্ট “লর্ড অব দ্য রিংগস” এর শূটিং হয় প্রায় আট বছর ধরে। এর মধ্যে আঠারো মাস পিটার শুটিং করেন নিউজিল্যান্ডে। তিনি ১৯৭৮ সালের এ্যানিমেশান “লর্ড অব দ্য রিংগস” দেখে প্রথমে আগ্রহী হন। যখন তিনি মূল উপন্যাস পড়েন, খুব অবাক হন যে কেউ এই মুভি নিয়ে কাজ করছে না কেন!! অনেক শর্ত সাপেক্ষে তিনি এই উপন্যাসের স্বত্ত লাভ করেন মুভি বানানোর জন্য। তার মধ্য একটা শর্ত ছিলো মিরাম্যাক্স ফিল্ম প্রডাশন হাউজ থেকে তার "কিং কং" মুভি রিলেজ করতে হবে। শেষ পর্যন্ত ২০০১ থেকে ২০০৩ এই তিন বছরে নিউ লাইন প্রোডাকশন থেকে মুক্তি পায় “লর্ড অব দ্য রিংগস” এর তিন খন্ড : "দ্য ফেলোশিপ অব দ্য রিং", "দ্য টু টাওয়ারস্‌" এবং "দ্য রিটার্ন অব দ্য কিং"। কিছুদিন পরেই অবশ্য তিনি প্রিক্যুয়েল "দ্য হবিট" এর কাজ শুরু করেন তিনি। যাই হোক, বই এর ক্ষেত্রে টলকিন এগিয়ে থাকলে পিটার জ্যাকসন'ই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন? তিন পর্ব একত্রে এটি হলিউডের সর্বোচ্চ আয়কারি মুভি এখনো। আর আলাদা আলাদা যথাক্রমে ৩২তম, ২৪তম এবং ৬ষ্ট। শুধু তাই না, মোট ৩০টি শাখাতে নমিনেশান পেয়ে ১৭ টি শাখাতে অস্কার লাভ করে এই মুভি ট্রিলজি যার মধ্যে "দ্য রিটার্ন অব দ্য কিং" সেরা মুভি নির্বাচিত হয় । এটি এখনো একমাত্র ফ্যান্টাসি মুভি যা অস্কার লাভ করে। একবার চিন্তা করুন তো; ১১টি শাখায় নমিনেশান, সব গুলোতেই জয়ী!! পিটার জ্যাকসন নিজে তিনটি অস্কার পায়।

দ্য ফেয়রী-টেল অব দ্য রিং :
 প্রথমেই যেটা অবাক করে তা হলো এই মুভির ব্যাপ্তি; শায়ার থেকে রোহান, মিনাস ট্রিথ থেকে গন্ডর... কি বিশাল এক ম্যাপ। মিডল আর্থ কে নিজের মত করে তৈরী করেছিলেন টলকিন আর তাকে আকৃতি দান করার সম্পূর্ন কৃতিত্ব দিব পিটার জ্যাকসন কে। কল্পনার জগৎ কতখানি ডালপালা মেললে এটা তৈরী করা সম্ভব!! ফ্রোডোর মত একটা দুর্বল হবিট এর ঘাড়ে যখন এত বড় একটা দায়িত্ব এসে পরে তখন নিজের অজান্তেই হতাশ হতে হয়। তবে তা কেটে যাতে সময় লাগে না। এই মহাকাব্য শেখায় বন্ধুত্ব; শেখায় ভালোবাসা। লোভ এবং লালসাকে জয় করতে শেখায় "লর্ড অব দ্য রিংস"। না; আমি মোটেও এই মহাকাব্যের বিশাল কোনো কাহিনী বলতে যাবো না। শুধুমাত্র লেখার খাতিরে যতটুকু বলতে হয়... যারা দেখেছেন এই মুভি তারা ভালোমতই জানেন কি এটি। আর যারা দেখেন নি (খুজে পাওয়া দুষ্কর) তাদের বলতে পারি শুধু এই এক মুভি না দেখার জন্য আপনার মুভি জগৎ অর্ধেকে আটকে আছে।

“That there’s some good in this world, Mr. Frodo… and it’s worth fighting for.”
– Sam


স্যামকে মূল বইতে ফ্রোডোর চাইতেও বেশি ভুমিকা পালন করতে দেখা গিয়েছে। ফ্রোডো আর স্যাম, মেরী আর পিপিন এরা বন্ধুত্বের সংজ্ঞা নতুন করে শিখিয়েছে। মুভিতে ভিন্ন ভিন্ন গোত্রের মিশ্রন দেখি আমরা। যেমন সাধারন মানুষ, হবিটস, এলভস, ডুয়ারভস, উইজার্ড, অর্ক, গব্লিংস ইত্যাদি। এত ধরনের সংমিশ্রন এত সৃষ্টিশীলভাবে আর কোথাও হয়েছে বলে আমার জানা নাই। শুরুতে হবিটদের গ্রাম শায়ারকে দেখানো হয় রুপকথার রাজ্যের মতই। সেখান থেকে হঠাৎ করেই কালো ছায়া চলে আসে। মুভি দেখতে দেখতে যদি প্রথমে আবার টেনে দেয়া যায় কেউ বোধহয় বিশ্বাস করবে না একই মুভি। ডার্ক লর্ড সাউরন সমগ্র বিশ্বকে নিজের করতলে আনার জন্য যে আংটি খুজছে সেটি রক্ষার জন্য সব গোত্রের মানুষ এক হয়। ফ্রোডো রিংগের দায়িত্বে, সাথে তিন বন্ধু স্যাম, মেরী আর পিপিন; রক্ষায় আছে ইসিলডুরের বংশধর এবং গনডরের প্রকৃত রাজা এ্যারাগন, এলভস রাজ্য মির্কউডের রাজপুত্র লিগোলাস, ডুয়ার্ভস রাজা গ্লোয়িন পুত্র গিলমি, বোরেমিয়ার এবং সর্বোপরি গ্যানডালফ। পরে ফ্রোড আর স্যাম আলাদা হয়ে যায় যাদের সাথে জোটে আমার দেখা এখন পর্যন্ত সেরা ক্রিয়েচার 'গোলাম'। সবার যাত্রা মর্ডর রাজ্যে; সেখানকার মাউন্ট ডূমে। গ্যানডালফ এর বিখ্যাত উক্তিঃ

“The board is set, the pieces are moving. We come to it at last, the great battle of our time.”
– Gandalf


একমাত্র ওই আগুন'ই পারে রিংগটাকে ধ্বংস করতে। এ্যাডভেঞ্চার মুভির অভাব নাই হলিউডে; তবে প্রকৃত এ্যাডভেঞ্চার আমি পেয়েছি একমাত্র এই ট্রিলজিতে। তলোয়ারের ঝঞ্ঝনানি, যুদ্ধ, বিভীষিকা, লোভ, বাতাসে তিরের শীষ কাটা অথবা অর্কদের উপরে নির্বিচারে কুড়লের আঘাত সব কিছুর সাথে কিন্তু ভালোবাসাও ছিলো। যেমন এ্যারউইন আর এ্যারাগন। মূল বইতে যদিও এ্যারুইন কে একজন যোদ্ধা নারী হিসেবে দেখানো হয়েছে তবে পিটার তার চরিত্রকে নতুন ভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং দর্শক ও সমালোচকদের কাছে যথেষ্ট প্রশাংসাও পেয়েছেন।

“I would rather share one lifetime with you than face all the Ages of this world alone.”
– Arwen


 
দ্য আর্ট অব ক্যারেক্টারাইজেশানঃ

এই মুভির প্রোটাগনিষ্ট কে? এখানে লেখক চরম আয়রনির পরিচয় দিয়েছেন। সব সুপার হিউম্যান ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ বাদ দিয়ে তিনি তুলে ধরেছেন হবিট ফ্রোডো ব্যাগিংস কে। রিং তার হাতে এসে পরে তার চাচা বিলবো ব্যাগিংস এর মাধ্যমে। বিলবো কিন্তু প্রিক্যুয়েল "হবিট" এর মূল চরিত্র। ফ্রোডোকে আপাতঃদৃষ্টিতে দেখলে দুর্বল মনে হলেও মানসিকভাবে কিন্তু সে সবাইতে শক্ত। ফ্রোডো চরিত্রে Elijah Wood এক কথাতে অসাধারন ছিলেন। তার বন্ধু স্যামের (Sean Astin) বেলাতেও এই কথা প্রযোজ্য। অনেকের মতেই স্যাম মূল হিরো, ফ্রেঞ্চ ম্যাগাজিন The Reliable One এর মতেঃ

" Samwise represents the Superego. Indeed, he's the only one of the Fellowship who doesn't leave the path to Mount Doom. He's the Red Oni and Frodo is the Blue."

গ্যানডালফ দ্য উইজার্ড; একজন ঐশ্বরিক দূত এবং সেই একমাত্র যে সাউরন এর সাথে লড়তে পারে। তাকে বলা হয় ভালার (গ্রেটার এ্যাঞ্জেল)। এলফদের "রিং অব ফায়ার" বহনকারী। তাকে পাইয়োনিয়ার বলা যায়। পুরো মুভিতে তার উক্তিগুলো মনে গেথে যাবার মত। Ian McKellen এর চাইতে পার্ফেক্ট আর কেউ হতে পারত না এই চরিত্রের জন্যে।

“Well, what can I tell you? Life in the wide world goes on much as it has this past Age, full of its own comings and goings, scarcely aware of the existence of Hobbits, for which I am very thankful.”
– Gandalf

এবার আসি আমার সবচাইতে প্রিয় লর্ড এ্যারাগন চরিত্রে। Viggo Mortensen যদি এই চরিত্র করার পরে আর কোনো মুভি নাও করত তাও আমি তাকে আমার অতি পছন্দের অভিনেতাদের ছোট্ট তালিকার উপরের দিকেই রাখতাম। দুঃখ লাগে এই মাপের একজন অভিনেতা কখনো অস্কার পায় নি। যদি মুভির হিরো খুজতে চান তাহলে বলতে বাধ্য হবেন পিটার জ্যাকসনের ট্রিলজিতে এ্যারাগন'ই নায়ক। একজন রাফ রেঞ্জার সে, ভয় কি তা জানে না; ইসুলডোরের যোগ্য উত্তরসূরি। "আ সিম্বল অব হেরিটেজ" বলব আমি তাকে।

কিছুটা হিউমার এনেছেন পরিচালক লিগোলাস আর গিলমি চরিত্রের মাধ্যমে। চরম মজা পেয়েছি তাদের দুইজনের গুনে গুনে অর্ক হত্যা করা দেখে। লিগোলাস চরিত্রে Orlando Bloom আর গিলমি চরিত্রে John Rhys-Davies অভিনয় করেন।

স্মিগুয়েল বা গোলাম চরিত্র চিত্রায়ন ছিলো পিটার জ্যাকসনের জন্য সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি এই চরিত্রটা বইয়ের চাইতেও অনেক বেশী ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। Andy Serkis এর অনবদ্য অভিনয় আর সেই সময়ের বিশ্বসেরা স্পেশাল ইফেক্টের ব্যাবহার এই দুইয়ে মিশেল গোলাম চরিত্রটাকে অন্যমাত্রা দিয়েছে। 'হবিট' বইয়ে একটা ক্ষুদ্র চরিত্র "লর্ড অব দ্য রিংগসে" সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা পায়। তার "My Precious" কথাটা যেন পুরো মহাকাব্যের'ই একটা সাবটাইটেল। যে কোনো পরিচালকের জন্য self-conflict বা আত্ত্ব-দন্দ ফুটিয়ে তোলা অনেক কঠিন বিষয়। গোলাম চরিত্রটির মধ্য আমরা সবসময় দেখেছি দন্দে ভুগতে। শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ যেমন ভুগেছিলো স্কটল্যান্ডের রাজা ডানকান কে হত্যার পূর্বে, আবার হ্যামলেট যেমন দ্বিধাতে পরেছিলো "Nunnery Scene" এ এবং "to be or not to be - that is the question" বলতে বাধ্য হয়েছিলো; ঠিক তেমনি গোলামকে তার Precious এর জন্য একই সমস্যাতে পরতে দেখি আমরা। তাই তো তাকে বলতে দেখিঃ
"Master betrayed us. Wicked. Tricksy, False. We ought to wring his filthy little neck. Kill him! Kill him! Kill them both! And then we take the precious... and we be the master!"
আবার ফ্রোডো তাকে ফারামিয়ার এর হাত থেকে বাচানোর পরে সে বলেঃ
"We swears to serve the master of the precious. We will swear on... on... the precious!"
পিটার জ্যাকসনের হাতে গোলাম যে অন্যরুপ পেয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সব চরিত্র নিয়ে কথা বলা সম্ভব না। এ্যারউইন চরিত্রে Liv Tyler এবং ইউওয়েন চরিত্রে Miranda Otto... দুইজন'ই আমার অসম্ভব প্রিয়। আর Hugo Weaving তার অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এলরন্ড চরিত্রে।

ফাইনালাইজেশানঃ

মুভি থিয়েটারে মুক্তির সময়ে এর সর্বমোট দৈর্ঘ ছিলো ৫৫৮ মিনিট। পরে ৬৮১ মিনিটের এক্সটেনডেন্ট এডিশান ডিভিডি তে রিলেজ করা হয়। আর ব্লু-রে তে টোটাল ৭২৬ মিনিটের ডিরেক্টরস্‌ কাট এডিশান। এত বিশাল ব্যাপ্তির মুভি অথচ একটুকু সময়ের জন্যেও ধৈর্য হারা হতে দেয় না কিন্তু। যতবার দেখেছি প্রতিবার'ই মুগ্ধ হয়েছি, খেয়াল করেছি আগেরবার কিছু না কিছু চোখ ফাকি দিয়ে গেছে। বেশিরভাগ জায়গাতেই ধুসর দৃশ্যপট, অথচ এত ভালো লাগে...!! এর সাথে হাওয়ার্ড স্কোরের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যে একেবারে পার্ফেক্ট কম্বিনেশান তা প্রতিটি মুহূর্তে মনে হয়েছে। "লর্ড অব দ্য রিংগস" নতুন করে ভাবতে শেখায়, আর দেয় অনুপ্রেরণাঃ

“A day may come when the courage of men fails… but it is not THIS day.”
– Aragorn

 
"Song of the Litte Road" বা "পথের পাচালী"; ১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায়ের এই মুভিতে অপু চরিত্রে অভিনয় করা সূবীর ব্যানার্জি এখন কোথায়? কি করেন তিনি? অপুর'ই বা কি হলো "পথের পাচালীর" পরে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবেন "শব্দ" মুভির জন্য ওপার বাংলার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলীর মুভি "অপুর পাচালীতে"।

নভেম্বারে International Film Festival of India তে প্রিমিয়ার হয় "অপুর পাচালীর" এবং Best Director হিসেবে পুরস্কার পান কৌশিক গাঙ্গুলি। অসম্ভব গুনি এই পরিচালকের উপরে নিঃসন্দেহে ভরষা করা যায় যে তিনি আমাদের দারুন কিছু একটা উপহার দেবেন। পরম্ব্রত অভিনয় করেছেন সূবীর ব্যানার্জি বা অপুর ভূমিকাতে; সাথে পার্নো মিত্র। "পথের পাচালী"র কিছু দৃশ্য'ও নাকি ফ্লাশ ব্যাকে দেখানো হয়েছে; সাথে পরিচালকের নিজের ন্যারেশান। ইন্দ্রদ্বীপ দাসগুপ্ত আছেন সঙ্গিত পরিচালনাতে। ছবির মুক্তির দিন এখনো ঠিক হয় নি।

ভেবে দেখুন তো; "পথের পাচালী"কে অনেকেই বলেন সেরা বাংলা ছায়াছবি আর বিশ্বের সেরা ১০০ সিনেমার মধ্যও থাকবে বলেই ধারনা করেন অনেকে। অথচ এই মুভিতে অপু চরিত্রে রূপদানকারী শিশু শিল্পি সূবীর ব্যানার্জি কোনো এক রহস্যগত কারনে আর কখনো মিডিয়ার সামনে আসেন নি। কি অবস্থাতে আছেন তিনি। পরিচালক কোশিক গাঙ্গুলী প্রায় ভূলে যাওয়া এই মানুষটাকে হঠাৎ করেই আইরনিক্যালি হাজির করেছেন তার "অপুর পাচালীতে"। এই মুভিকে তিনি উৎসর্গ করেছেন ছিনেমা জগতের হাজার হাজার শিশুশিল্পিদের উদ্দেশ্যে। তিনি ছবি সম্পর্কে বলেন; "বাস্তব জীবনের সূবীর ব্যানার্জি আর কল্পনার অপুর মধ্য অনেক মিল। আর এটাই আমাকে সবচাইতে বেশী করে টেনেছে। তবে এটাকে সূবীর ব্যানার্জির জীবনী ভাবলে ভূল করবেন কারন এর বেশীরভাগ'ই কল্পনা প্রসূত"।