পরিচালকঃ পল ভ্যারহোভেন

অভিনয়ঃ ক্যারি ভ্যান হথেন, সেবাস্তিয়ান কোচ, থম হফম্যান।
IMDB: 7.8

“In this movie, everything has a shade of grey. There are no people who are completely good and no people who are completely bad. It's like life. It's not very Hollywoodian”

“সোলজার অফ অরেঞ্জ” খ্যাত ডাচ পরিচালক পল ভ্যারহোভেনের “ব্লাক বুক” (ডাচ নাম Zwartboek) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপরে নির্মিত ডাচ মুভি। মুভিটি রাচেল স্টেইন/ এলিস দে ভ্রাইস (ক্যারি ভ্যান হথেন) নামক এক জ্যুইস মেয়েকে ঘিরে তৈরী হলেও আমার কাছে মুল আকর্ষন ছিলো এই মুভিতে সেবাস্তিয়ান কোচের উপস্থিতি। কোচের অভিনিত “দ্যা লাইভস অফ আদারস” অতি প্রিয় মুভিগুলোর মধ্য একটি। মুভিটি সত্য কাহিনী অবলম্বনে তৈরী বলে দাবী করলেও এখানে আসলে অনেকগুলো সত্য ঘটনা একত্র করা হয়েছে। মুভিটি যখন মুক্তি দেওয়া হয়, তখন এটি নেদারল্যন্ডের ইতিহাসের সবচাইতে বেশী বাজেটের ছবি ছিলো। উপরে যে কোটেশান দেওয়া তা পরিচালকের নিজের এবং এইটা যে কতটা সত্য তা শুধু মুভিটা দেখলেই বোঝা সম্ভব। ট্র্যাজেডির বাস্তব সংজ্ঞা পাওয়া যাবে মুভিটি দেখলে। সাথে মাঝে মাঝে কপালে ভাজ পড়বে ষড়যন্ত্র এবং অবিশ্বাসে।

মুভির পুরোটাই ফ্লাসব্যাক। শুরুতেই আমরা দেখতে পাই ১৯৫৬ সালের ইজরাইল। রুনি নামের এক ডাচ মহিলা তার স্বামীর সাথে ইজরাইলে আসলে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় যুদ্ধের সময়ে তার পরিচিত রাচেলের সাথে। রুনির প্রস্থানের পরে রাচেল কাছেই নদীর তীরে বসে অতীতের কথা চিন্তা করতে থাকে, ১৯৪৪ এর নেদারল্যান্ডের কথা। এইক্ষেত্রে মুভির শেষে রাচেল বেঁচে থাকবে নি মারা যাবে এই উত্তেজনা থেকে আমরা বঞ্চিত হই।

মুভিতে আমরা রাচেল কে একজন গায়ীকা হিসেবে পাই। নাজীদের কাছ থেকে লুকাতে সে যে ফার্ম হাউজে আশ্রয় নেয় তা ভূলক্রমে আমেরিকান শেল দ্বারা ধুল্যিস্যাৎ হয়ে যায়। রাচেল রব নামের স্থানীয় এক ছেলের সাহায্যে পালাতে সক্ষম হয়, দেখা করে স্মাল নামের এক উকিলের সাথে এবং বাবার গচ্ছিত কিছু টাকা নিয়ে ভ্যান গেইন নামক একজনের সাহায্যে দক্ষিনে পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু পথে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সে তার মা, বাবা, ভাই এবং রব – সবাইকে হারায়। নিজে বেঁচে থাকলেও সেটা ছিলো নেদারল্যন্ডের নাজী অধ্যুষিত এলাকা।

এরপর থেকে নাটকীয়তা বাড়তে থাকে। রাচেল এরপর এলিস দে ভ্রাইস নাম নিয়ে স্থানীয় নাজী প্রতিরোধকারী সংগঠনে গার্বেন কুপার এর অধিনে যোগদান করে। সে কাজ শুরু করে ডাক্তার হ্যান্স এ্যকারমেন্স এর সাথে। ট্রেনে তার সাথে পরিচয় হয় নাজী এস. ডি. অফিসার লুড্যিক ম্যুন্তয্যের (সেবাস্তিয়ান কোচ) সাথে। শুরু হয় প্ররোচনা। রাচেল নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করে এস. ডি. হেডকোয়ার্টারে আসতে সক্ষম হয়। সৃষ্টি হয় অনেকের সাথে শত্রুতার, হ্যান্স এ্যকারমেন্স এর সাথে পরিকল্পনা করে এস. ডি. হেডকোয়ার্টারে প্রভাব সৃষ্টি আর লুড্যিক ম্যুন্তয্যের ও রাচেলের কারাগার বন্দি হওয়া – পরিচালক প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। আসলে এরপর অনেক কাহিনী টানটান উত্তেজনার মধ্যে এগিয়ে চলে যা বলে দিলে মুভির মূল মজাটাই নষ্ট হবে।

কথাতে আছে ‘শেষ হইয়াও হইলনা শেষ’। এই মুভিতে যখনি মনে হয়েছে এবার শেষ হবে, তখনি আলাদা মোড় নিয়েছে। মুভি শেষ না হওয়া অবধি আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না যে মুল ষড়যন্ত্র আসলে কি ছিলো। মুভিতে এস. ডি. অফিসার লুড্যিক ম্যুন্তয্যে এর মধ্য ভালোবাসাটাই বেশি পাবেন ঘৃনার চাইতে যদিও সে নাজী অফিসার। ক্যারি ভ্যান হথেন ও সেবাস্তিয়ান কোচের অনবদ্য অভিনয় ভালো লাগবে সবার। কিছু ক্ষেত্রে সেক্সচ্যুয়ালিটি এবং ভায়োলেন্স ছিলো অতিরিক্ত। তবে ওয়ার্ল্ড ওয়ারের মুভি যদি পছন্দ করেন তাহলে এই মুভি দেখা বাধ্যতামূলক।

 
পরিচালকঃ জ্যা-পিয়েরে জ্যুয়েট

অভিনয়ঃ আড্রে টাতাও, য্যাস্পার্ড ইউলিয়েল, জোডি ফস্টার, ম্যারিওন কোটিলার্ড।
IMDB: 7.7

"Manech loves Mathilde, Mathilde loves Manech!"

 
ফ্রেঞ্চ পারিচালক জ্যা-পিয়েরে জ্যুয়েট আর আড্রে টাতাও জুটির “এমেলি” মুভির পর দ্বিতীয় মুভি “আ ভেরি লং এঙ্গেজমেন্ট”। এটাকে নিঃসন্দেহে এপিক মুভি বলা যায়। দুই ঘন্টা তেরো মিনিটের এই ফ্রেঞ্চ মুভির দৃশ্যপট প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষ সময়ে। মুভির প্রথমেই যেটা চোখে পরে সেটা হলো এর চিত্রায়ন, এক কথায় অসাধারন – সোনালী দৃশ্যপট কখনো সেপিয়া আবার কখনো ধুসর। এটাকে বলা যায় ম্যথিলদে (আড্রে টাতাও) আর ম্যনেক (য্যাস্পার্ড ইউলিয়েল) এর লাভ স্টোরি, যার সাথে যুক্ত হয়েছে যুদ্ধের ভয়াবহতা।

মুভির শুরুতে দেখা যায় ফ্রেঞ্চ ওয়ার ট্রেঞ্চে পাঁচ ফ্রেঞ্চ সেনাকে জার্মান আর ফ্রেঞ্চ ওয়ার জোনের মধ্যের ‘নো ম্যনস্‌ ল্যন্ড” এ মৃত্যুর জন্য ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তাদের অপরাধ তারা নিজেরাই নিজেদের যখম করেছে যাতে তারা আহত এই জন্য বাসায় যেতে পারে। এই পাঁচজন হলো বাস্তস, সিক্স- সউস, আঙ্গি, বেয়নেত নতরডেম এবং মুভির ম্যথিলদের ফিয়ান্সে – ম্যনেক। ফ্রেঞ্চ ট্রেঞ্চ এর নাম বিঙ্গো কাপাস্কুল।  আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় এই পাচঁজন’ই মারা যায় জার্মান আর্টিলারির আঘাতে। কিন্তু ম্যথিলদে আশা হারায় না। সে বিশ্বাস করতে থাকে তার ফিয়ান্সে ম্যনেক তার জন্য পৃথিবীর কোথাও না কোথাও অপেক্ষা করছে।

মুভিতে ফ্লাসব্যকের ব্যবহার প্রচুর। এর ফলে কখনো কখনো কিছু বিষয় গুলিয়ে যেতে পারে। ম্যাথিলদে ছোটবেলাতে পোলিওতে আক্রান্ত হয়। এতে সে ঠিকমত হাটতে পারে না। তার মা-বাবা মারা যায় অনেক আগেই, সে মানুষ হয় তার চাচা-চাচীর কাছে। স্বর্গের মত এক ছোট্টগ্রামে তার দিন কাটে তার পোষা কুকুর- বিড়ালদের সাথে। ম্যানেকের সাথে তার পরিচয়ও সেই ছোট্টবেলায় স্কুলে পড়ার সময়। ম্যনেকের বাবা স্থানীয় লাইট-হাউজের কেয়ারটেকার। ম্যাথিলদে আর ম্যনেক বড় হয় লাইট-হাউজের উপরে খেলা করতে করতে যেখান থেকে চোখে পড়ে সম্পূর্ন গ্রাম ও পাশে চকচকে সাগর। তাদের ভালোবাসা পরিপূর্নতা পায় এখানে।

এরপর শুরু হয় যুদ্ধের বিভীষিকা। মুভিতে কিছু সেপিয়া টোনে যুদ্ধের ছবি দেখানো হয়েছে যা বাস্তব। ম্যাথেলদে কে ছেড়ে ম্যানেক যায় জার্মানদের বিপক্ষে যুদ্ধ করতে। যুদ্ধ শেষ হবার ঠিক আগে ম্যথেলদে খবর পায় তার ফিয়ান্সের নিশ্চিত মৃত্যুর খবর। ম্যাথিলদে, অবশ্যই বিশ্বাস করে না ম্যানেক তাকে ছেড়ে গিয়েছে। তার বিশ্বাস- সে যদি মারা যেত, তবে অবশ্যই সে জানত।

এভাবেই শুরু হয় এক পোলিও আক্রান্ত তরুনির সত্যের সন্ধানে এক অবিশ্বাস্য যাত্রা। ম্যাথিলদে ধার করে একজন পার্সিয়ান ডিটেকটিভকে । তার এই যাত্রার পথে সে ম্যনেক এর শেষদিনগুলা সমন্ধে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করে। তার পরিচয় হয় আমেরিকান অভিনেত্রি যোডি ফস্টারের সাথে যে এই মুভিতে একজন পোলিস মহিলা হিসেবে অভিনয় করেছে। এই মুভিতে তার কোনো নাম পাওয়া যায় নি । আস্তে আস্তে আসে প্রতিশধের উন্মাদনায় পাগল হয়ে যাওয়া টিনা লম্বার্ডি (ম্যারিওন কোটিলার্ড)। ম্যাথিলদে আস্তে আস্তে উন্মোচন করে বিঙ্গো কাপাস্কুলে আহত সব সেনাকে। সে বুঝতে পারে সে শুধু একা নয়, আরো অনেকেই খুজছে তাদের প্রিয় মানুষকে। তাদের সহায়তাতে সে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায়।

মুভিতে যুদ্ধের দৃশ্য প্রচুর। ভায়োলেন্স এর’ও অভাব নেই। মুভির প্লট নিঃসন্দেহে ভীষন কম্লিকেটেড। ক্যরেক্টারের মিশেল আর তাদের প্রত্যেকের প্রয়োজনীয়তা মুভির কমপ্লেক্সিটি বাড়িয়েছে।

যেটা না বললেই নয়, আড্রে টাতাও এবং য্যাস্পার্ড ইউলিয়েল- এই দুইজনের অভিনয়’ই অবিশ্বাস্য। টাতাও এর ইনোসেন্স ম্যাথিলদের ভূমিকা বাড়িয়েছে অনেকাংশে। ম্যাথিলদে ম্যনেক কে খুজে পেয়েছে কি না এইটা এখন’ই বলা ঠিক না। তবে এটা ঠিক, সে খুজে পেলো কি পেল না সেটা বড় কথা নয়, তার খোজার জন্য যে কষ্ট, যে স্পৃহা – এটাই এই মুভির রেটিং বাড়িয়েছে অনেকাংশে।