পরিচালকঃ জন হাসটন

অভিনয়ঃ হাম্ফ্রে বোগার্ড, টিম হল্ট, ওয়াল্টার হাসটন।
IMDB: 8.4

They sold their soul for the treasure of the Sierra Madre…

জন হাসটনের চিত্রনাট্য এবং পরিচালনায় আমেরিকান মুভি “দ্য ট্রেজার অফ সিয়েরা মাদ্রে” আমেরিকার বাইরে শুটিং হওয়া প্রথম মুভিগুলার মধ্য অন্যতম। পরিচালক হাসটন এই মুভির আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সক্রিয় ভুমিকা রেখেছিলেন তার অনেক ডকুমেন্ট্রির সাহায্যে। আর হাম্ফ্রে বোগার্ট ততদিনে বিখ্যাত হয়ে গেছেন হলিউডে তার “কাসাব্লাংকা” মুভির জন্য। ফলে এই জূটির সংমিশ্রন স্বভাবতই দর্শকদের তুমুল আগ্রহের সৃষ্টি করেছিলো। তারা নিরাশও হননি। “দ্য ট্রেজার অফ সিয়েরা মাদ্রে” হলিউডের সর্বকালের সেরা দশটি ক্লাসিকের মধ্যে যেকোনো টপচার্টে স্থান নিতে সক্ষম হয়েছে। মজার বিষয় হলো এই মুভিতে হাওয়ার্ড নামের চরিত্রে পরিচালকের বাবা ওয়াল্টার হাসটন অভিনয় করেছেন এবং বাবা, ছেলে দুইজন’ই অস্কার লাভ করেছেন।

১৯২০ সালের মেক্সিকান পটভূমিতে তৈরি এই মুভিতে অনেকটা ওয়েষ্টার্ন মুভির স্বাদ পাওয়া যায়। লোভ আর এ্যডভেঞ্চারের সংমিশ্রন ঘটেছে মুভিটিতে। শুরুতে দেখা যায় ডবস (হাম্ফ্রে বোগার্ট) আর কার্টেন (টিম হল্ট) কে শুধু খাবারের পয়সা জোগার করার জন্য মানুষের কাছে হাত পাততে। তারা দুইজন’ই ম্যকর্মিক নামক এক অসৎ লোকের মাধ্যমে প্রতারিত হয়। ভাগ্যক্রমে মেক্সিকোর টেম্পিকো নামক স্থানে তাদের পরিচয় ঘটে হাওয়ার্ড (ওয়াল্টার হাসটন) নামের এক বৃদ্ধ রত্নসন্ধানির। হাওয়ার্ড’ই তাদের বলে সিয়েরা মাদ্রে পাহাড়ে থাকা স্বর্ণের কথা। মূলত কাহিনী এখানেই শুরু।

যাত্রা শুরু হয় ট্রেন দিয়ে। মাঝেই তৎকালিন সময়ে বেড়ে ওঠা দস্যুদের হামলা, হবস এর সুনিপুন পিস্তল চালানো। হাওয়ার্ডকে আমরা পাই সবচাইতে কঠিন আর বুদ্ধিমান হিসেবে। সে এই মুভির অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ কারন সে ছাড়া সোনার খোজ আর কেও জানে না। তার কথা থেকেই বোঝা যায় সে এখানে আগেও এসেছে (I know what gold can do to men’s soul) । একসময় তারা সিয়েরা মাদ্রেতে পৌছায়। স্বন্ধান পায় স্বর্ণের গুঁড়ার। নাটকীয় হয়ে ওঠে পরিবেশ।

আমরা এইসময় ডবসকে এন্টিহিরো হিসেবে দেখতে পাই। লোভ শীঘ্রই বাসা বাধে হবস এর মনে, সততা এবং বিশ্বাস আস্তে আস্তে লোপ পায়। আটমাস তারা থাকে পাহাড়ে। গুপ্তধন সম্পূর্ণ কব্জা করার সাথে সাথে তাদের মনে ভয় বাসা বাধে। ডবস এর মনে সবসময় একটা সন্দেহ ঘুরতে থাকে- কার্টেন আর হাওয়ার্ড বোধহয় তাকে খুন করে তার ভাগের স্বর্ণ লুট করে নেবে। হাওয়ার্ড স্থানীয় গ্রামের এক অসুস্থ শিশুকে বাচিয়ে তুলে তাদের কাছে হিরো পরিচয় পায়। দস্যুদের আক্রমন, ডবস কর্তৃক কার্টেন কে গুলি, দস্যু কর্তৃক ডবস কে গুলি, হাওয়ার্ডের অনুসারীদের মাধ্যমে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া... শেষ অবধি টানটান উত্তেজনা আর ভাগ্যের নির্মম খেলা - এভাবেই কাহিনী এগিয়ে যায়।  শেষে কার ভাগ্যে সোনা জোটে বা আদৌ জোটে কি না তা জানতে হলে মুভির শেষ না দেখে উপায় নাই।

ছেলে জন হাসটন এবং বাবা ওয়াল্টার হাসটন দু’জন’ই অস্কার লাভ করেন যথাক্রমে শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্বঅভিনেতা হিসেবে। শ্রেষ্ঠ মুভি হিসেবেও এটি অস্কারে নমিনেশান পায়। বরাবরের মতই বোগার্ড তার অভিনয় দিয়ে দর্শক হৃদয় জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক স্ট্যনলি কুবরিক “দ্য ট্রেজার অফ সিয়েরা মাদ্রে” মুভিটিকে তার পছন্দের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুভিগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রেখেছেন। আমেরিকার  লাইব্রেরী অফ কংরেস এই মুভিটিকে সামাজিক ও ঐতিহাসিকভাবে আলাদা গুরুত্ব দিয়েছে।

এই মুভি সম্পর্কে টাইম ম্যগাজিনের বিখ্যাত উক্তিঃ

“Treasure of Sierra Madre is one of the best things Hollywood has done since it learned to talk; and the movie can take a place, without blushing, among the best ever mad
 
পরিচালকঃ জ্যাক স্নাইডার

অভিনয়ঃ হেনরি ক্যাভিল, এ্যামি এ্যডামস্‌, রাসেল ক্রো, কেভিন কোষ্টনার, মাইকেল শ্যানোন
IMDB: 7.4

“Sometimes, you have to take a leap of faith first. The trust part comes later…”

নিউইয়র্কের বিশাল বিশাল সব অট্টালিকা, জেট বিমান থেকে শুরু করে হেলিকাপ্টার, গাড়ি ও রাস্তাঘাট মুড়ির মত গুড়ো গুড়ো হয়ে যাচ্ছে। মানবজাতির সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ক্রিপটন গ্রহের জেনারেল জডের সাথে। একটা এলিয়েন জাতির সাথে পৃথিবীবাসির কি পেরে ওঠা সম্ভব? চলুন, তাহলে পরিচিত হই আমাদের সুপারহিরো ক্লার্ক কেন্টের সাথে যাকে সুপারম্যান বলে সম্বোধন করলেই হয়ত বেশী চিনবেন।

ডিসি কমিক্সের সুপারহিরো ‘সুপারম্যানের’ সাথে পরিচয় নেই এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর। রুপালী পর্দাতেও বহুবার আমাদের সামনে হাজির হয়েছে এই অতিমানব। তবে দ্যা গ্রেট ক্রিস্টোফার নোলান তার “ডার্ক নাইট ট্রিলজিতে” যেভাবে ব্যাটম্যানকে নতুনভাবে আবিস্কার করেছেন তেমনি জ্যাক স্নাইডারও তার “ম্যান অফ স্টিল” মুভিতে সুপারম্যানের সংজ্ঞার একটা রিভোলিউশান এনে দিয়েছেন। কি নেই এই মুভিতে? স্ক্রিপ্ট রচনাতে ডেভিড গয়্যার এবং স্টোরিতে ক্রিস্টোফার নোলানের সহযোগিতাতে জ্যাক স্নাইডারের “ম্যান অফ স্টিল” এ আপনি পাবেন ক্লার্ক কেন্ট / কাল-এল ওরফে সুপারম্যানের ভুমিকাতে হেনরি কেভিলকে, তার বাবা জর এল এর ভুমিকাতে রাসেল ক্রো, পালিত বাবা জনাথন কেন্ট এর ভুমিকায় কেভিন কোষ্টনার, জেনারেল জডের ভুমিকাতে মাইকেল শ্যানোন, লুইস লেইনের ভুমিকায় এ্যামি এ্যডামস্‌... সাথে ফ্রি হ্যান্স জিমারের মিউজিক। আর কি চাই? সুপারম্যান চরিত্রে ত্রিশ বছর বয়সি ছয় ফুট এক ইঞ্চির হেনরি ক্যাভিল অভিনয়ে তার জাত চিনিয়েছেন। একটা মজার তথ্য দেয়া যেতে পারে এখানে যে ব্যাটম্যান চরিত্রে ক্রিশ্চিয়ান বেল, স্পাইডারম্যান চরিত্রে এন্ড্রু গারফিল্ড এবং সুপারম্যান এর হেনরি কেভিল – এই তিন সুপারহিরো’ই ব্রিটিশ; পিওরলি হলিউডিয়ান নন।

ক্রিপটন গ্রহ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সভ্যতার চুরান্ত শিখরে পৌছে যাওয়া এ গ্রহে কোনো শিশু স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিতে পারে না; রাষ্ট্রের চাহিদা মোতাবেক শিশু জন্ম নিচ্ছে এবং আগেই ঠিক হয়ে যাচ্ছে কে হবে ডাক্তার, কে কৃষক, কে ইঞ্জিনিয়ার বা শ্রমিক। কিন্তু বহু শতাব্দীর মধ্য প্রথমবারের মত জার এল এবং লারার ঘরে জন্ম নিতে যাচ্ছে কোনো স্বাভাবিক শিশু এবং অবশ্যই এটি রাষ্ট্রের অগচরে। তাদের সন্তান কাল এল যেদিন ভূমিষ্ঠ হয় সেদিন প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যাবহারের ফলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রিপটন গ্রহে এক রিভোলিউশান দেখা দেয়। জেনারেল জড এবং জার এল মধ্যে শুরু হয় তুমুল লড়াই। জার এল তার সন্তানকে স্পেসশীপে করে পাঠিয়ে দেন পৃথিবীতে যার প্রকৃতি এবং ক্রিপটন গ্রহের প্রকৃতির সাথে যথেষ্ট মিল খুজে পাওয়া যায়। সাথে দিয়ে দেন এক বিশেষ জেনেটিক কোডেক্স। যুক্ত্রাষ্ট্রের এক ছোট্ট গ্রামে (আমেরিকা ছাড়া আর কোথাও সুপার হিরো জন্মাইতে পারবে বলে মনে হয় না) কাল এলকে খুজে পায় কেন্ট দম্পতি; সাথে ‘S’ খোদাই করা এক ছোট স্টিলের দন্ড। তাদের কাছেই মানুষ হয় সে ক্লার্ক কেন্ট নামে। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্য অস্বাভাবিকতা আবিস্কার করে তার পালিত মা-বাবা। ক্লার্ক একসময় বড় হয়। কালক্রমে পরিচয় হয় লুইস লেইনের সাথে। একসময় বাবার কাছে জানতে পারে সে তার পালিত পুত্র; সে খুজেও পায় তার আসল পরিচয় । কিন্তু নিজের পরিচয় খুজতে গিয়ে সে তার অবস্থান জানিয়ে দেয় জেনারেল জডকে। শুরু হয় নতুন অধ্যায়। হুমকির মুখে পরে গোটা মানবজাতি। নীল কস্টিউমের বুকে লাল অক্ষরে লেখা ‘S’ আর পিঠে একখন্ড লাল কাপড়; সাথে রুক্ষ কিন্তু ভীষন আকর্ষনীয় ফিগারের সুপারম্যান হাজির হয় পর্দার সামনে।

এরপর শুধুই ইতিহাস। ফিরে আসে জেনারেল জড। হুমকি দেয় পুরো পৃথিবীকে।  এমন ধ্বংসাত্মক মুভি হলিউডে আর হয়েছে কি না জানি না। পরিচালক স্নাইডার সাহেব দেখিয়েছেন ভাংচুর কাকে বলে, উহা কত প্রকার এবং কি কি। ভাঙ্গাভাঙ্গিরও একটা লিমিট থাকে; কিন্তু পরিচালক সেই লিমিট পার করেও বহুদুর চলে গেছেন। মনের আনন্দে গুড়ো গুড়ো করেছেন ইয়া বড় বড় সব বিল্ডিং। তেলের পাম্প, হেলিকাপ্টার এমনকি জেট বিমান’ও যেভাবে ধ্বংস করেছেন মনে হয়েছে মনে হয়েছে মুভি না, অন্য কিছু দেখছি। দুর্দান্ত সব স্ট্যান্ট; এক সেকেন্ডের জন্যেও চোখ সরানো যায় না। নিউইয়র্ক শহরকে তাসের ঘরের মতই দেখাচ্ছিলো।  বিনোদনের নুন্যতম ঘাটতিও দেখা দেয় নি এই মুভির এ্যাকশান দৃশ্যগুলোতে। তবে পুরো মুভিতে রোমান্সের অভাব বলে ক্রিটিকরা দাবী করেছেন। মুভির সাউন্ড ইফেক্ট অসাধারন। ভলিউম হাই দিয়ে দেখুন মুভিটা, অন্যজগতে চলে যাবেন।

রাসেল ক্রো এবং কেভিন কোষ্টনারের অভিনয় নিয়ে বলার কিছুই নাই। তারা আরেকবার প্রমান করেছেন যে কোনো চরিত্রের জন্যেই তারা পার্ফেক্ট। জেনারেল জড চরিত্রে মাইকেল শ্যানোন ছাড়া অন্য কাউকে মানাতো বলেও মনে হয় না। দক্ষতা দেখিয়েছে এ্যামি এ্যডামস্‌ও। আর হেনরি ক্যাভিলের অভিনয় ছিল যথেষ্ট মেধাবি। সুপার হিরো কিন্তু যাকে তাকে মানায় না এবং দর্শকও সবাইকে গ্রহন করে না। এই ক্ষেত্রে হেনরি ক্যাভিল সম্পূর্ণ সফল বলা চলে। তার সাবলিল অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে।

এই মুভিতে কাহিনী সমাপ্ত হলেও ২০১৫ সালেই হেনরি ক্যাভিল আবার ফিরে আসছে সুপারম্যান চরিত্রে এই একই পরিচালকের হাত ধরে। সাথে থাকছে বোনাস হিসেবে বেন এফ্লেক থাকছে ব্যাটম্যান হিসেবে। তবে দুঃখের বিষয় ক্রিস্টোফার নোলানকে আমরা আর পাচ্ছি না স্টোরি রাইটার হিসেবে। যাই হোক; অপেক্ষায় রইলাম দেখার জন্য।