পরিচালকঃ নোরা ইফ্রন

অভিনয়ঃ টম হ্যাংকস, মেগ রায়ান
IMDB: 6.3

“Someone you pass on the street may already be the love of your life.......”

একবার মনে করুন তো আপনি যাকে ভালোবাসেন তার সাথে আপনার ই-মেইল চ্যাট হয় কিন্তু তাকে আপনি সরাসরি চিনেন না; অথচ আপনার সাথে তার প্রতিদিন দেখা হয়। সে আপনার সরাসরি ব্যাবসায়ী শত্রু এবং শুধুমাত্র না চেনার কারনে তার সাথে আপনার বিবাদ লেগেই থাকে। কি? ঠোট চিমটানো শুরু করলেন? ঠিক এমনই এক মজার কাহিনী আপনি পাবেন নোরা ইফ্রন পরিচালিত রোমান্টিক কমেডি “ইউ হ্যাভ গট মেইল” মুভিতে। অভিনয়ে আছেন চিরতরুন টম হ্যাংকস এবং আমেরিকান রোমান্টিক কমেডি কুইন মেগ রায়ান। মূলত মুভিটি ১৯৪০ সালের “দ্যা শপ এরাউন্ড দ্যা কর্নার” এর রিমেক। “ইউ হ্যাভ গট মেইল” এর আগেও আরেকটি রিমেক বের হয়েছিলো; ১৯৪৯ সালে জুডি গারল্যান্ড অভিনীত “ইন দ্যা গুড ওল্ড সামারটাইম”। টম হ্যাংকস এবং মেগ রায়ান কিন্তু রোমান্টিক কমেডি জুটি হিসেবে ভীষণ সমাদৃত। তারা তিনটি মুভিতে জুটি হিসেবে অভিনয় করেছেন – “জো ভার্সেস দ্যা ভলকানো”, “ইউ হ্যাভ গট মেইল” এবং “স্লিপলেস ইন সিয়াটল”। প্রতিটি মুভি’ই চরম দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।

ক্যাথলিন ক্যালি (মেগ রায়ান) এর সম্পর্ক ফ্রাঙ্ক (গ্রেগ কিনার) এর সাথে আর জো ফক্স (টম হ্যাংকস) এর সম্পর্ক প্যাট্রিসিয়া ( পার্কার পোজি) এর সাথে। কিন্তু ক্যাথলিন ও ফক্সের পরিচয় হয় AOL ই-মেইল এ। কেউ কাউকে দেখে নি; আসল নাম’ও জানে না। ক্যাথলিন ‘শপ গার্ল’ এবং ফক্স ‘NY152’ নামে একজন আরেকজনের কাছে মেইল আদান-প্রদান করে। এ তো গেলো ভার্চুয়াল লাইফের কথা। বাস্তবে ফক্স নিউ ইয়র্কের একদম নতুন বিশাল বই এর দোকান ‘ফক্স বুকস্‌’ খুলতে যাচ্ছে। আর ক্যাথলিনের ওই রাস্তার’ই মোড়ের ছোট বই এর দোকানের নাম ‘দ্যা শপ এরাউন্ড দ্যা কর্নার’ যেটা তার মা’এর ছিলো।  যাই হোক; একদিন ফক্স ঘটনাক্রমে ‘দ্যা শপ এরাউন্ড দ্যা কর্নার’ এ আসে। পরিচয় হয় ক্যাথলিনের সাথে। জানতে পারে ক্যাথলিনের ‘ফক্স বুকস্‌’ এর প্রতি বিরূপ মনোভাব। ব্যাস শুরু হয় তাদের মধ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ওইদিকে তারা কিন্তু চ্যাটিং চালিয়েই যাচ্ছে না জেনে। মজার মজার সব কান্ড ঘটাতে থাকে তারা একে অপরকে ছাড়িয়ে যাবার জন্যে। কিন্তু সকল চেষ্টা সত্ত্বেও ‘দ্যা শপ এরাউন্ড দ্যা কর্নার’ ডুবতে বসে। এভাবেই এগিয়ে যায় মুভির কাহিনী। তাদের পরিচয় কিভাবে ফাস হবে? তাদের সম্পর্ক কেমন থাকবে? এর বেশী আর না বলি; চট করে দেখে ফেলুন অসাধারন এই মুভি। সময় নষ্ট হবে না, এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন।

রোমান্টিক মুভি লাভারদের সবসময়ের প্রিয় মুভি “ইউ হ্যাভ গট মেইল”। সে সময়ে ইন্সট্যান্স চ্যাট অপশন না থাকলেও এই মেইল আদান প্রদানের বিষয়টা কিন্তু বেশ মজার ছিলো; অনেকটা চিঠি আদান প্রদানের মত। মুভিতে তরুন টম হ্যাংকস ও মেগ রায়ান এর প্রানবন্ত উপস্থিতি চোখে পরার মত।  সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের এই মুভি না দেখে থাকলে চরম মিস করবেন।  

 
পরিচালকঃ হুয়ান সোলানেস

অভিনয়ঃ জিম স্টারগেজ, কার্স্টেন ডাচ, টিমোথি স্পল।
IMDB: 6.3

"Two worlds. One future..."

প্রথমত সায়েন্স ফিকশান আর রোমান্সের মিশেল, দ্বিতীয়ত বড় কাষ্টিং... যত বড় প্রত্যাশা নিয়ে বসেছিলেম তার চাইতেও বেশি হতাশ হলাম আর্জেন্টাইন পরিচালক হুয়ান সোলানেস এর “আপ-সাইড ডাউন” দেখে। অনেক অনেক প্রশ্নের কোনো সদুত্তর ছাড়াই শেষ হয়ে গেলো মুভিটি। রটেন টমাটোর মতেঃ

A movie that will surely wow audiences with its awesome visuals but floor them with its terrible storytelling.

টিপিক্যাল হলিউডিয়ান মুভি না “আপ-সাইড ডাউন”; ফ্রেঞ্চ - কানাডিয়ান মুভি। দুই মধ্যাকার্ষন শক্তি সম্পন্ন সম্পন্ন পৃথিবীতে দুই ধরনের লাইফ সিস্টেম; উপরের স্তরের মানুষ আর নিম্ন স্তরের মানুষ। কেউ কারো সাথে মিশতে পারবে না। একেবারে আলাদা গ্রাভিটি সম্পন্ন এই দুই প্রকারের মানবজাতীর মধ্য সব কিছুতেই পার্থক্য থাকা স্বত্তেও এ্যাডাম আর ইডেন এর মধ্য ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। বাংলা মুভিতে আমরা যেমন দেখি গরিব ঘরের ছেলের সাথে বড়লোকের ঘরের মেয়ের সম্পর্ক হয়... অনেকটা সে রকম। তবে এটা সত্যি; মুভির ভিজ্যুয়াল অসাধারন। সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক মন ছুয়ে যায়। অনেক প্রশ্নের অবতারনে করলেও এটা মাথায় রাখা বাধ্যতামূলক যে আপনি ফিকশানের জগতে আছেন; এখানে ফ্যাক্ট খুজতে যাওয়া মোটেও ঠিক হবে না। বেশ কিছু মজার দৃশ্য আমরা পেয়েছি এই মুভিতে। বিশেষ করে এ্যাডাম (জিম স্টারগেজ) আর ইডেন (কার্স্টেন ডাচ) এর গ্রাভিটি শুন্য রোমান্স আমাকে যথেষ্ট বিনোদন দিয়েছে। জানি না কেন, এই মুভি দেখার সময় “ইন্সেপসান” এর কথা বারবার মনে হচ্ছিলো। আধুনিক যুগের রোমিও ও জুলিয়েট বলা যায়, যেখানে এ্যান্টাগনিষ্ট হলো ট্রেন্সওয়ার্ল্ড। জিম স্টারগেজ এবং কার্স্টেন ডাচের অভিনয় নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না; বরাবরের মতই অসাধারন। তবে ওই যে বললাম; মুভি শেষ হবার পরেও অতৃপ্ত থেকে যাবেন।




 
পরিচালকঃ জন ম্যাডেন

অভিনয়ঃ গিনেথ প্যলট্র, জোসেফ ফিয়েন্স, জিওফ্রে রাস
IMDB: 7.2

“You are my dream; you are my nightmare too…”

১৯৯৮ সাল মুভি ক্রিটিকদের জন্য নিঃসন্দেহে ভীষন কষ্টকর ছিলো সেরা মুভি বেছে নেয়ার জন্য। “এলিজাবেথ”, “শেক্সপিয়ার ইন লাভ”, “লাইফ ইজ বিউটিফুল”, “সেভিং প্রাইভেট রেন”, “দ্যা থিন রেড লাইন”, “আমেরিকান হিষ্টরি এক্স”... কি এক এক টা মুভি। এদের মধ্য সেরা বাছা যে কতটা কষ্টকর তা জুরিবোর্ড ভালোমতই বুঝেছে যদিও আমাদের মত আমজনতার জন্য এটা শাপে বর হয়েছে। কিন্তু স্বয়ং শেক্সপিয়ার’ই হাজির, সেখানে অন্য কারো দাম থাকার কথা না। ফলে যা হবার - সব মুভিকে পেছনে ফেলে অস্কার জিতে নেয় জন ম্যাডেনের রোমান্টিক কমেডি “শেক্সপিয়ার ইন লাভ”। সমস্যা হলো অনেক সমালোচকের মতেই এই মুভির অস্কার পাওয়া ঠিক হয়নি। কার কেমন লেগেছে জানি না, আমার কিন্তু ভীষন পছন্দের মুভি। এক একটা ডায়ালগ মনে দাগ কেটে যায়। এটাকে ঠিক কমেডি মুভি বলা উচিত না কারন স্যাটায়ারগুলা সিরিয়াস টাইপের। মার্ক নরম্যন এবং টম স্টপার্ড তাদের মেধার সম্পুর্ণ ঢেলে দিয়েছেন এই মুভির স্ক্রিপ্ট লেখার জন্য। উইলিয়াম  শেক্সপিয়ার এর ভূমিকাতে ভালোভাবেই উতরে গেছেন জোসেফ ফিয়েন্স শুধুমাত্র তার অভিনয় দক্ষতার বশে। আর গিনেথ প্যলট্র তো একেবারে অস্কার’ই জিতে ফেলেছেন ভায়োলা চরিত্রে অভিনয় করে।

১৫৯৩ সালের লন্ডন। রোজ থিয়েটারের মালিক উইলিয়াম শেক্সপিয়ার (জোসেফ ফিয়েন্স) “রোমিও এ্যন্ড এথেল; আ পাইরেটস্‌ ডটার” নামের একটা নতুন কমেডি লেখার সময় রাইটার্স ব্লকে ভুগতে থাকে। নাটকে অভিনয়ের জন্য অডিশান শুরু হলে থমাস কেন্ট নামের একজনকে তার পছন্দ হয়ে যায় মূল চরিত্রের জন্য। এই থমাস কেন্ট’ই হলো ছদ্মবেশে থাকা ভায়োলা (গিনেথ প্যলট্র) । যারা শেক্সপিয়ারের রচনার সাথে পরিচিত তাদের ভালই জানার কথা তার নাটকের মধ্য ছদ্মবেশ একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ; আর সে সময় স্টেজে মেয়েদের অভিনয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। খুব বেশি সময় লাগে না উইলিয়ামের কাছে তার প্রকৃত পরিচয় উন্মোচন হতে; ভালোবাসা জন্মাতেও দেরী হয় না। ভায়োলার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে কলম চলতে শুরু হয় শেক্সপিয়ারের। “রোমিও এ্যন্ড এথেল” নাম বদলে যায় “রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট” এ। পর্দাতে আমরা দেখতে পাই সেই সময়ের আরেক বিখ্যাত নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লোকে। তার “ডক্টর ফস্টাস” এর কথা বারবার আসে।

যাই হোক, এত সুখ চলতে থাকলে তো হতোই, ফাটল দেখা দেয় ভালোবাসাতে। উইলিয়াম আগেই বিবাহিত ছিলো, বউ এর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে বহু বছর আগে। এদিকে আবার ভায়োলার পরিবার থেকে বিয়ে ঠিক করে বিশাল জমিদার লর্ড ওয়েসেক্স এর সাথে। রানী এলিজাবেথের মঞ্চ সম্পর্কিয় দূত এডমান্ড টিলনে জানতে পারে রোজ থিয়েটারে একজন মেয়ে অভিনয় করছে। রোজ থিয়েটার বন্ধ করে দেওয়া হয়; “রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট” এর ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পরে। শেষ অবধি উপায়ন্তর না দেখে রিচার্ড বারবেজ এর থিয়েটারে নাটক মঞ্চস্থ করার সিদ্ধান্ত নেয় শেক্সপিয়ার। শেক্সপিয়ার নিজে অভিনয় করবে রোমিও চরিত্রে, আর জুলিয়েট চরিত্রে মঞ্চের আরেকটা ছেলে। ভায়োলা জানতে পারে তার বিয়ের দিন এই নাটক মঞ্চস্থ হবে। চারিদিকে কঠোর নিরাপত্তা, এর মাঝে কি ভায়োলা পারবে নাটক শুরু হবার আগে মঞ্চে আসতে? এই প্রশ্নের উত্তর আমি নাহয় নাই বা দিলাম। তবে মুভি দেখার সময় এর ডায়ালগগুলো খেয়াল করবেন; ভালো লাগতে বাধ্য।  এই মুভিতে বেন এ্যফ্লেকের ভক্তরা কিছু সময়ের জন্য হলেও তাকে পাবেন।

সাতটা অস্কার জেতা চট্টিখানি কথা নয়, তাও আবার তেরোটি শাখাতে নমিনেশান পেয়ে। এই মুভিতে ভালোলাগা অনেক ডায়ালগ আছে, সব দেয়া সম্ভব নয়। দু’একটা তুলে ধরলামঃ

“My lady, the tide waits for no man, but I swear it would wait for you..”

“You will never age for me, nor fade, nor die.”

“Love knows nothing of rank or river bank.”

“As stories must when love's denied: with tears and a journey.”