পরিচালকঃ হুয়ান সোলানেস

অভিনয়ঃ জিম স্টারগেজ, কার্স্টেন ডাচ, টিমোথি স্পল।
IMDB: 6.3

"Two worlds. One future..."

প্রথমত সায়েন্স ফিকশান আর রোমান্সের মিশেল, দ্বিতীয়ত বড় কাষ্টিং... যত বড় প্রত্যাশা নিয়ে বসেছিলেম তার চাইতেও বেশি হতাশ হলাম আর্জেন্টাইন পরিচালক হুয়ান সোলানেস এর “আপ-সাইড ডাউন” দেখে। অনেক অনেক প্রশ্নের কোনো সদুত্তর ছাড়াই শেষ হয়ে গেলো মুভিটি। রটেন টমাটোর মতেঃ

A movie that will surely wow audiences with its awesome visuals but floor them with its terrible storytelling.

টিপিক্যাল হলিউডিয়ান মুভি না “আপ-সাইড ডাউন”; ফ্রেঞ্চ - কানাডিয়ান মুভি। দুই মধ্যাকার্ষন শক্তি সম্পন্ন সম্পন্ন পৃথিবীতে দুই ধরনের লাইফ সিস্টেম; উপরের স্তরের মানুষ আর নিম্ন স্তরের মানুষ। কেউ কারো সাথে মিশতে পারবে না। একেবারে আলাদা গ্রাভিটি সম্পন্ন এই দুই প্রকারের মানবজাতীর মধ্য সব কিছুতেই পার্থক্য থাকা স্বত্তেও এ্যাডাম আর ইডেন এর মধ্য ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। বাংলা মুভিতে আমরা যেমন দেখি গরিব ঘরের ছেলের সাথে বড়লোকের ঘরের মেয়ের সম্পর্ক হয়... অনেকটা সে রকম। তবে এটা সত্যি; মুভির ভিজ্যুয়াল অসাধারন। সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক মন ছুয়ে যায়। অনেক প্রশ্নের অবতারনে করলেও এটা মাথায় রাখা বাধ্যতামূলক যে আপনি ফিকশানের জগতে আছেন; এখানে ফ্যাক্ট খুজতে যাওয়া মোটেও ঠিক হবে না। বেশ কিছু মজার দৃশ্য আমরা পেয়েছি এই মুভিতে। বিশেষ করে এ্যাডাম (জিম স্টারগেজ) আর ইডেন (কার্স্টেন ডাচ) এর গ্রাভিটি শুন্য রোমান্স আমাকে যথেষ্ট বিনোদন দিয়েছে। জানি না কেন, এই মুভি দেখার সময় “ইন্সেপসান” এর কথা বারবার মনে হচ্ছিলো। আধুনিক যুগের রোমিও ও জুলিয়েট বলা যায়, যেখানে এ্যান্টাগনিষ্ট হলো ট্রেন্সওয়ার্ল্ড। জিম স্টারগেজ এবং কার্স্টেন ডাচের অভিনয় নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না; বরাবরের মতই অসাধারন। তবে ওই যে বললাম; মুভি শেষ হবার পরেও অতৃপ্ত থেকে যাবেন।




 
পরিচালকঃ জ্যাক স্নাইডার

অভিনয়ঃ হেনরি ক্যাভিল, এ্যামি এ্যডামস্‌, রাসেল ক্রো, কেভিন কোষ্টনার, মাইকেল শ্যানোন
IMDB: 7.4

“Sometimes, you have to take a leap of faith first. The trust part comes later…”

নিউইয়র্কের বিশাল বিশাল সব অট্টালিকা, জেট বিমান থেকে শুরু করে হেলিকাপ্টার, গাড়ি ও রাস্তাঘাট মুড়ির মত গুড়ো গুড়ো হয়ে যাচ্ছে। মানবজাতির সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ক্রিপটন গ্রহের জেনারেল জডের সাথে। একটা এলিয়েন জাতির সাথে পৃথিবীবাসির কি পেরে ওঠা সম্ভব? চলুন, তাহলে পরিচিত হই আমাদের সুপারহিরো ক্লার্ক কেন্টের সাথে যাকে সুপারম্যান বলে সম্বোধন করলেই হয়ত বেশী চিনবেন।

ডিসি কমিক্সের সুপারহিরো ‘সুপারম্যানের’ সাথে পরিচয় নেই এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর। রুপালী পর্দাতেও বহুবার আমাদের সামনে হাজির হয়েছে এই অতিমানব। তবে দ্যা গ্রেট ক্রিস্টোফার নোলান তার “ডার্ক নাইট ট্রিলজিতে” যেভাবে ব্যাটম্যানকে নতুনভাবে আবিস্কার করেছেন তেমনি জ্যাক স্নাইডারও তার “ম্যান অফ স্টিল” মুভিতে সুপারম্যানের সংজ্ঞার একটা রিভোলিউশান এনে দিয়েছেন। কি নেই এই মুভিতে? স্ক্রিপ্ট রচনাতে ডেভিড গয়্যার এবং স্টোরিতে ক্রিস্টোফার নোলানের সহযোগিতাতে জ্যাক স্নাইডারের “ম্যান অফ স্টিল” এ আপনি পাবেন ক্লার্ক কেন্ট / কাল-এল ওরফে সুপারম্যানের ভুমিকাতে হেনরি কেভিলকে, তার বাবা জর এল এর ভুমিকাতে রাসেল ক্রো, পালিত বাবা জনাথন কেন্ট এর ভুমিকায় কেভিন কোষ্টনার, জেনারেল জডের ভুমিকাতে মাইকেল শ্যানোন, লুইস লেইনের ভুমিকায় এ্যামি এ্যডামস্‌... সাথে ফ্রি হ্যান্স জিমারের মিউজিক। আর কি চাই? সুপারম্যান চরিত্রে ত্রিশ বছর বয়সি ছয় ফুট এক ইঞ্চির হেনরি ক্যাভিল অভিনয়ে তার জাত চিনিয়েছেন। একটা মজার তথ্য দেয়া যেতে পারে এখানে যে ব্যাটম্যান চরিত্রে ক্রিশ্চিয়ান বেল, স্পাইডারম্যান চরিত্রে এন্ড্রু গারফিল্ড এবং সুপারম্যান এর হেনরি কেভিল – এই তিন সুপারহিরো’ই ব্রিটিশ; পিওরলি হলিউডিয়ান নন।

ক্রিপটন গ্রহ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সভ্যতার চুরান্ত শিখরে পৌছে যাওয়া এ গ্রহে কোনো শিশু স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিতে পারে না; রাষ্ট্রের চাহিদা মোতাবেক শিশু জন্ম নিচ্ছে এবং আগেই ঠিক হয়ে যাচ্ছে কে হবে ডাক্তার, কে কৃষক, কে ইঞ্জিনিয়ার বা শ্রমিক। কিন্তু বহু শতাব্দীর মধ্য প্রথমবারের মত জার এল এবং লারার ঘরে জন্ম নিতে যাচ্ছে কোনো স্বাভাবিক শিশু এবং অবশ্যই এটি রাষ্ট্রের অগচরে। তাদের সন্তান কাল এল যেদিন ভূমিষ্ঠ হয় সেদিন প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যাবহারের ফলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রিপটন গ্রহে এক রিভোলিউশান দেখা দেয়। জেনারেল জড এবং জার এল মধ্যে শুরু হয় তুমুল লড়াই। জার এল তার সন্তানকে স্পেসশীপে করে পাঠিয়ে দেন পৃথিবীতে যার প্রকৃতি এবং ক্রিপটন গ্রহের প্রকৃতির সাথে যথেষ্ট মিল খুজে পাওয়া যায়। সাথে দিয়ে দেন এক বিশেষ জেনেটিক কোডেক্স। যুক্ত্রাষ্ট্রের এক ছোট্ট গ্রামে (আমেরিকা ছাড়া আর কোথাও সুপার হিরো জন্মাইতে পারবে বলে মনে হয় না) কাল এলকে খুজে পায় কেন্ট দম্পতি; সাথে ‘S’ খোদাই করা এক ছোট স্টিলের দন্ড। তাদের কাছেই মানুষ হয় সে ক্লার্ক কেন্ট নামে। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্য অস্বাভাবিকতা আবিস্কার করে তার পালিত মা-বাবা। ক্লার্ক একসময় বড় হয়। কালক্রমে পরিচয় হয় লুইস লেইনের সাথে। একসময় বাবার কাছে জানতে পারে সে তার পালিত পুত্র; সে খুজেও পায় তার আসল পরিচয় । কিন্তু নিজের পরিচয় খুজতে গিয়ে সে তার অবস্থান জানিয়ে দেয় জেনারেল জডকে। শুরু হয় নতুন অধ্যায়। হুমকির মুখে পরে গোটা মানবজাতি। নীল কস্টিউমের বুকে লাল অক্ষরে লেখা ‘S’ আর পিঠে একখন্ড লাল কাপড়; সাথে রুক্ষ কিন্তু ভীষন আকর্ষনীয় ফিগারের সুপারম্যান হাজির হয় পর্দার সামনে।

এরপর শুধুই ইতিহাস। ফিরে আসে জেনারেল জড। হুমকি দেয় পুরো পৃথিবীকে।  এমন ধ্বংসাত্মক মুভি হলিউডে আর হয়েছে কি না জানি না। পরিচালক স্নাইডার সাহেব দেখিয়েছেন ভাংচুর কাকে বলে, উহা কত প্রকার এবং কি কি। ভাঙ্গাভাঙ্গিরও একটা লিমিট থাকে; কিন্তু পরিচালক সেই লিমিট পার করেও বহুদুর চলে গেছেন। মনের আনন্দে গুড়ো গুড়ো করেছেন ইয়া বড় বড় সব বিল্ডিং। তেলের পাম্প, হেলিকাপ্টার এমনকি জেট বিমান’ও যেভাবে ধ্বংস করেছেন মনে হয়েছে মনে হয়েছে মুভি না, অন্য কিছু দেখছি। দুর্দান্ত সব স্ট্যান্ট; এক সেকেন্ডের জন্যেও চোখ সরানো যায় না। নিউইয়র্ক শহরকে তাসের ঘরের মতই দেখাচ্ছিলো।  বিনোদনের নুন্যতম ঘাটতিও দেখা দেয় নি এই মুভির এ্যাকশান দৃশ্যগুলোতে। তবে পুরো মুভিতে রোমান্সের অভাব বলে ক্রিটিকরা দাবী করেছেন। মুভির সাউন্ড ইফেক্ট অসাধারন। ভলিউম হাই দিয়ে দেখুন মুভিটা, অন্যজগতে চলে যাবেন।

রাসেল ক্রো এবং কেভিন কোষ্টনারের অভিনয় নিয়ে বলার কিছুই নাই। তারা আরেকবার প্রমান করেছেন যে কোনো চরিত্রের জন্যেই তারা পার্ফেক্ট। জেনারেল জড চরিত্রে মাইকেল শ্যানোন ছাড়া অন্য কাউকে মানাতো বলেও মনে হয় না। দক্ষতা দেখিয়েছে এ্যামি এ্যডামস্‌ও। আর হেনরি ক্যাভিলের অভিনয় ছিল যথেষ্ট মেধাবি। সুপার হিরো কিন্তু যাকে তাকে মানায় না এবং দর্শকও সবাইকে গ্রহন করে না। এই ক্ষেত্রে হেনরি ক্যাভিল সম্পূর্ণ সফল বলা চলে। তার সাবলিল অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে।

এই মুভিতে কাহিনী সমাপ্ত হলেও ২০১৫ সালেই হেনরি ক্যাভিল আবার ফিরে আসছে সুপারম্যান চরিত্রে এই একই পরিচালকের হাত ধরে। সাথে থাকছে বোনাস হিসেবে বেন এফ্লেক থাকছে ব্যাটম্যান হিসেবে। তবে দুঃখের বিষয় ক্রিস্টোফার নোলানকে আমরা আর পাচ্ছি না স্টোরি রাইটার হিসেবে। যাই হোক; অপেক্ষায় রইলাম দেখার জন্য।