"Song of the Litte Road" বা "পথের পাচালী"; ১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায়ের এই মুভিতে অপু চরিত্রে অভিনয় করা সূবীর ব্যানার্জি এখন কোথায়? কি করেন তিনি? অপুর'ই বা কি হলো "পথের পাচালীর" পরে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবেন "শব্দ" মুভির জন্য ওপার বাংলার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলীর মুভি "অপুর পাচালীতে"।

নভেম্বারে International Film Festival of India তে প্রিমিয়ার হয় "অপুর পাচালীর" এবং Best Director হিসেবে পুরস্কার পান কৌশিক গাঙ্গুলি। অসম্ভব গুনি এই পরিচালকের উপরে নিঃসন্দেহে ভরষা করা যায় যে তিনি আমাদের দারুন কিছু একটা উপহার দেবেন। পরম্ব্রত অভিনয় করেছেন সূবীর ব্যানার্জি বা অপুর ভূমিকাতে; সাথে পার্নো মিত্র। "পথের পাচালী"র কিছু দৃশ্য'ও নাকি ফ্লাশ ব্যাকে দেখানো হয়েছে; সাথে পরিচালকের নিজের ন্যারেশান। ইন্দ্রদ্বীপ দাসগুপ্ত আছেন সঙ্গিত পরিচালনাতে। ছবির মুক্তির দিন এখনো ঠিক হয় নি।

ভেবে দেখুন তো; "পথের পাচালী"কে অনেকেই বলেন সেরা বাংলা ছায়াছবি আর বিশ্বের সেরা ১০০ সিনেমার মধ্যও থাকবে বলেই ধারনা করেন অনেকে। অথচ এই মুভিতে অপু চরিত্রে রূপদানকারী শিশু শিল্পি সূবীর ব্যানার্জি কোনো এক রহস্যগত কারনে আর কখনো মিডিয়ার সামনে আসেন নি। কি অবস্থাতে আছেন তিনি। পরিচালক কোশিক গাঙ্গুলী প্রায় ভূলে যাওয়া এই মানুষটাকে হঠাৎ করেই আইরনিক্যালি হাজির করেছেন তার "অপুর পাচালীতে"। এই মুভিকে তিনি উৎসর্গ করেছেন ছিনেমা জগতের হাজার হাজার শিশুশিল্পিদের উদ্দেশ্যে। তিনি ছবি সম্পর্কে বলেন; "বাস্তব জীবনের সূবীর ব্যানার্জি আর কল্পনার অপুর মধ্য অনেক মিল। আর এটাই আমাকে সবচাইতে বেশী করে টেনেছে। তবে এটাকে সূবীর ব্যানার্জির জীবনী ভাবলে ভূল করবেন কারন এর বেশীরভাগ'ই কল্পনা প্রসূত"।

 
পরিচালকঃ কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়

ওপার বাংলার কমার্শিয়াল মুভি গুলো কেমন তা বলতে পারব না তবে অন্যধারার চলচ্চিত্রগুলো যে আসলেই অন্যকিছু করার চেষ্টা করছে তা বোঝা যায়। একের পর এক মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে বিখ্যাত সব উপন্যাস অবলম্বনে করা চলচ্চিত্র। ফেলুদা, কাকাবাবু, টেনিদা, প্রফেসর শঙ্কু সবাই তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন বড় পর্দায়। এবার হাজির হতে যাচ্ছেন শঙ্কর রায় চৌধুরী; বাংলার প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস 'চাঁদের পাহাড়' অবলম্বনে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় তৈরী করেছেন টলিউডের সর্বোচ্চ বাজেটের এই চলচ্চিত্রটি। আসলে এখন পর্যন্ত যত বাংলা চলচ্চিত্র হয়েছে, তাদের সকলের মধ্যে চাঁদের পাহাড়-এর বাজেট সর্বোচ্চ। প্রায় পনেরো কোটি রুপি ব্যায়ে নির্মিত এই মুভিতে শঙ্করের ভূমিকাতে অভিনয় করেছেন টলিউডের জনপ্রিয় কমার্শিয়াল মুভির নায়ক দেব। তবে ট্রেলার দেখে যা বুঝলাম নিজেকে একেবারেই অন্যভাবে উপস্থাপন করেছেন তিনি এই মুভিতে। একটা কথা না বললেই না; দেব কোনো পারিশ্রমিক নেন নি এই মুভিতে অভিনয়ের জন্য। উড়ো চিঠি ও মেঘে ঢাকা তারা[৫] চলচ্চিত্রদ্বয়ের জন্য বিখ্যাত পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এই মুভির সম্পুর্ণ শুটিং করেছেন আফ্রিকাতে। এই ছবির জন্য বেশকিছু আকর্ষণীয় স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকাসহ উগান্ডায়ও এর শ্যুটিং করা হয়েছে। এছাড়া কালাহারি মরুভূমিতে শ্যুটিং করা হয়েছে। এখানে দিনের বেলা তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রী সেলসিয়াস হয়। ১৪ই নভেম্বরে ট্রেলার মুক্তির পরে ৩ দিনের মধ্যেই এক লক্ষেরও বেশি মানুষ ট্রেলার ইউটিউবে দেখে, যা বাংলা চলচ্চিত্র জগতে একটি রেকর্ড। ছবিটি এবেলা পত্রিকায় রিভিউ ৮/১০ পেয়েছে। একইদিনে মুক্তিপ্রাপ্ত ধুম থ্রি একই স্থানে রিভিউতে ৬.৫/১০ পায়।



দেব বলেন, "এরকম চলচ্চিত্র আর কখনই হবে না কারণ চাঁদের পাহাড়ের মত অভিযান কাহিনী বাংলায় আর দুটো নেই"। বলিউডের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ তরুণ আদর্শ বলেন, “আমরা মুম্বইতে বলাবলি করছি এটা বাংলার ‘কামিং অফ এজ’ ফিল্ম। শাহরুখ, হৃতিকের যে কোনও ছবির সঙ্গে তুলনা করা যায় ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের। শুধু একটাই আবেদন আমার, এই ছবিটা ইন্টারন্যাশনালি ভাল করে রিলিজ করুন প্রযোজকেরা”। প্রথমে দেব এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে এই দুইজনের একজনকে চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রের জন্য নির্বাচন করা হবে বলে ঠিক হয়েছিল। পরে পরিচালক ও প্রযোজক বলেছেন, প্রথম থেকেই তাদের ইচ্ছা ছিল দেবকে নেবার। কারণ দৃশ্যায়ণের জন্য এরকম স্পোর্টি দেহই তাদের চাই। উপন্যাসে আছে, শঙ্কর সাঁতার, পাহাড় চড়া, ঘোড়ায় চড়তে জানে। তাই তাকেই এই চরিত্রে নির্বাচন করা হয়। শঙ্করকে এছাড়াও সিংহের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। তাই দেবকে অনেক ওজন কমাতে হবে, কারণ শেষদিকে শঙ্কর মরুভূমিতে প্রায় উপোস করেই ছিল। যেহেতু কাহিনীর প্রেক্ষাপট আফ্রিকায়, তাই অনেক আফ্রিকানকে অভিনয়ের জন্য নিতে হয়েছে। ডিয়েগো আলভারেজ চরিত্রে কে থাকবেন এই নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনার শেষে জেরার্ড রুডলফকেই নেয়া হয়। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত সঙ্গিত পরিচালনা করেন।

"পাহাড়ের খুব ধারে আমি দাঁড়াচ্ছি, নিচে গভীর খাদ। আমি নিজে দাঁড়ালে ভয় করছে না। অন্য কেউ দাঁড়ালে মনে হয়েছে, ও যদি পড়ে যায়! এই ব্যাপারটা বারবার হয়েছে। রক ক্লাইম্বিং, হাতি, সিংহ, ব্ল্যাক ম্যাম্বার সাথে সিকোয়েন্সগুলো দেব নিজে করছিল। আমি খুবই ভয় পেয়ে যাচ্ছিলাম। একটা সময় খুব রেগেও গিয়েছিলাম। বেশ মন কষাকষিও হয়ে গিয়েছিল। আমি ওকে বলতাম, রিয়েলিজমের জন্য নিজে স্টান্ট করাটা ভাল। তোমার পিছনে হাতি দৌড়চ্ছে। আমরা তোমাকে বাহবা দিচ্ছি। কিন্তু যদি তোমার কিছু হয়, তাহলে বাংলার মানুষ আমার পিছনে ছুটবে। আর বাহবা যে পাব না সেটা বলাই বাহুল্য!"

—কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, চাঁদের পাহাড়ের বিপজ্জনক অংশের শ্যুটিংয়ে দেবের বিষয়ে কথা বলার সময়।