পরিচালকঃ ডেনিশ ভিলেনিয়ুভ

অভিনয়ঃ হিউ জ্যাকম্যান, জেক ইলেনহ্যাল, ভায়োলা ডেভিস, মেলিসা লিও, মারিয়া বেলো
IMDB: 8.1

" Every moment matters.."

“ভালো’র জন্য দোয়া করো, কিন্তু খারাপের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকো”; কেলার ডোভার কথাটা তার স্ত্রী গ্রেস ডোভারকে বলার সময় গলাটা একটু কেঁপে গিয়েছিলো কি? না মনে হয়। অথচ উচিৎ ছিলো কারন নিজের সাত বছরের মেয়ে এনা’র কিডন্যাপিং এর কথা বলছে সে। শুধু এনাই না; প্রতিবেশী বার্চ দম্পতীর মেয়ে জয়’ও নিখোজ। কে দায়ি এই কিডন্যাপিং এর জন্য? কেন’ই বা করেছে? দেখুন “প্রিজনারস্‌” মুভিটি। মূলত এই কিডন্যাপিং নিয়েই কাহিনী। IMDB তে 8.1, রটেন টমাটোতে ৮১% ফ্রেশারস্‌ রেটিং, সাথে ৮৮% অডিয়েন্স রেটিং... হলিউডে ঝড় তুলেছে কানাডিয়ান পরিচালক ডেনিশ ভিলেনিয়ুভ এর “প্রিজনারস্‌” মুভি। এই মুভিকে অলরেডি বলা হচ্ছে দশকের সেরা ক্রাইম থ্রিলার। হিউ জ্যাকম্যান, জেক ইলেনহ্যাল, ভায়োলা ডেভিস, মেলিসা লিও অভিনিত মুভিটি ক্রিটিকদের উচ্ছসিত প্রশাংসা পেয়েছে। মজার বিষয় হলো ডেনিশ ভিলেনিয়ুভ এর এটি প্রথম হলিউডের মুভি। এর আগে তার ফ্রেঞ্চ মুভি “ইন্সেন্ডাইস” বক্স অফিস বাজিমাত করেছিলো।

“প্রিজনারস আপনাকে ভুতের মত তাড়া করবে এবং আপনার সাথে আঠার মত লেগে থাকবে; এটা বছরের সেরা মুভিগুলোর একটা”; স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকা এইভাবেই ব্যাখ্যা করেছে মুভিটিকে। কিডন্যাপিং নিয়ে কাহিনী সেটা আগেই বলেছি, আর কিচ্ছু বলব না তাইলে সম্পূর্ণ টুইস্ট’ই নষ্ট হয়ে যাবে। তবে এটা বলতে পারি এমন মুভি না দেখলে কিছুটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে আপনার ছায়াছবির জগৎ। একদম স্লো পেসড্‌ মুভি; কিন্তু তাই বলে ভেবে বসবেন না বোরিং। থ্রিল কাকে বলে, উহা কত প্রকার ও কি কি তা হারে হারে বুঝিয়ে দেবে এই মুভি। এক মুহূর্ত আগেও আপনি বলতে পারবেন না পরে কি হবে। নিজের ক্ষেত্রে বলতে পারি রাত দুই’টার দিকে শুধু প্রিন্ট চেক করার জন্য মুভিটা চালু করেছিলাম। এরপর যতদুর মনে পরে পরবর্তি আড়াই ঘন্টা নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। এমন একটা মুভি যে শেষ না হলেই বোধহয় ভালো হত। কোথাও কোনো অসঙ্গতি নাই, প্রতিটি ক্যারেক্টার মিশে গিয়েছে মুভিতে। হিউ জ্যাকম্যান তার ক্যারিয়ারের সেরা অভিনয় করে ফেলেছেন এই মুভিতে বলেই মনে করেন অনেকে। ডিটেকটিভ লোকি চরিত্রে জেক ইলেনহ্যালও ছিলেন অসাধারন। এ্যারন গুজিকোস্কি স্ক্রিপ রাইটার হিসেবে অস্কার পেয়ে গেলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না। শ্বাসরুদ্ধকর এই ড্রামার প্রতিটি চরিত্রায়ন’ই অসাধারন। পরিচালক শেষ অবধি ধরে রেখেছেন টানটান উত্তেজনা। কোথাও কোনো তারাহুরা নাই, একেবারে ঠান্ডা মাথায় এগিয়েছে কাহিনী; তবে শরীরের প্রতিটি স্নায়ুকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম। প্রয়োজনের খাতিরে কিছুটা ভায়োলেন্স আনতেই হয়েছে, তাই বলে রক্ত হীম করা নয়। ধাঁধা আর রহস্যে ঘেরা মুভিতে মাঝেই মাঝেই নিঃশ্বাস নিতে ভুলে যাবেন; ভাববেন একটা হবে আরেকটা। অনেক ভালো থ্রিলার’ই বাজে সমাপ্তির জন্য নষ্ট হয়ে যায়। এটা আপনি মনে রাখবেন কারন মুভির শেষটাও অসাধারন। অস্কার পাবে কি না এটা বলা দুষ্কর তবে বেশ কিছু ক্যাটাগরিতে নমিনেশান পাবার কথা “প্রিজনারস্‌” এর। যাই হোক, এত কথা না শুনে দেখে ফেলুল একটা পার্ফেক্ট ক্রাইম থ্রিলার। ঘুরে আসুন পেন্সিল্ভেনিয়া থেকে। 

 
পরিচালকঃ মার্ক ফ্রষ্টার

অভিনয়ঃ জনি ডেপ, কেট উইন্সলেট, রাধা মিশেল, ডাস্টিন হফম্যান।
IMDB: 7.7

"Unlock Your Imagination..."

স্যার জেমস ম্যাথিও ব্যারি নামটা কি খুব পরিচিত মনে হচ্ছে? অনেকের’ই হবার কথা। যারা জানেন না তাদের বলছি এই মানুষটা বিশ্ববিখ্যাত চরিত্র পিটার প্যানের স্রষ্ঠা। পিটার প্যানকে মনে আছে তো? ওই যে, সেই চিরসতেজ মিষ্টেরিয়াস বালক; নেভারল্যান্ডে উড়ে বেড়ায়। যাই হোক; “ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড” স্যার জেমস ম্যাথিও ব্যারির’ই সেমি- অটোবায়োগ্রাফি। মার্ক ফ্রষ্টারের পরিচালিত মুভিটি অ্যালান নি রচিত “দ্যা ম্যান হু ওয়াজ পিটার প্যান” বই অবলম্বনে করা। জে, ব্যারির ভুমিকাতে আছেন ওয়ান এ্যান্ড অনলি জনি ডেপ। এছাড়া সিলভিয়া ডেভিডস্‌ ও চার্লস ফ্রোম্যানের এর ভুমিকায় যথাক্রমে কেট উইন্সলেট এবং ডাস্টিন হফম্যান অভিনয় করেছেন। অস্কারে সাতটি শাখাতে নমিনেশান পেলেও ‘বেষ্ট অরিজিনাল স্কোর’ শাখাতেই শুধুমাত্র পুরষ্কার পায় এই মুভি। “ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড” এ প্রথমেই যেটা চোখে পরবে সেটা হলো অসাধারন সিনেমাটোগ্রাফী; আর সাথে যুক্ত হয়েছে কাজমার্কের আবহ সঙ্গিত যা আপনাকে নেভারল্যান্ডের কল্পনার জগতে নিয়ে যাবে।

জেমস ব্যারির সাথে পিতৃহারা চার শিশু এবং তাদের মা’এর সাথে সম্পর্ককে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে মুভির মূল কাহিনী। এই পরিবার’ই ব্যারির উপরে পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলে পিটার প্যান সৃষ্টিতে। মুভির কাহিনী মোটেও বলা যাবে না। স্প্যলার  হয়ে যাবে। তারপরেও ছোট্ট করে বলি -  “লিটল ম্যারি” নাটকের ব্যার্থতার পরে নাট্যকার জেমস ব্যারি স্বভাবতই ভেঙ্গে পরে। এই সময় তার পরিচয় হয় বিপত্নীক সিলভিয়ার সাথে। কিংস্টোন গার্ডেনে সিলভিয়ার চার সন্তানের সাথে গভীর বন্ধুত্ত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে জেমস এর; বিশেষ করে ছোট্ট পিটার ডেভিস এর সাথে। তাদের ইনোসেন্স দেখেই জেমস এর মধ্যে প্রথম একটা চিন্তার উদয় হয়; ‘যদি বাচ্চাগুলো এমন’ই থাকত সারাজীবন, যদি তাদের বয়স না বাড়ত’। ওপরদিকে ব্যাক্তিগত জীবনে জেমস এর নানান ঝামেলা শুরু হয়। এইসময় এগিয়ে আসে চার্লস ফ্রোম্যান; তাকে সুযোগ দেয় তার মঞ্চে কাজ করবার। সৃষ্টি হয় পিটার প্যানের। কিন্তু জেমস ও সিলভিয়ার সম্পর্কের কি হবে? বাচ্চাগুলোকে কি সে হারাবে? শেষ অবধি কে সত্যিকারের নেভারল্যান্ডে যেতে পারবে?

জনি ডেপের অভিনয় সম্পর্কে বলার কিছু নাই। বরাবরের মতই অসাধারন। বেস্ট এ্যাক্টর হিসেবে নমিনেশান ও পেয়েছিলেন। কেট উইন্সলেটও তার অভিনয় দক্ষতার পূর্ণ পরিচয় রেখেছেন এই মুভিতে। পরিপুর্ণ তৃপ্তি পাবেন মুভি শেষ হলে। এটা কোনো ফ্যান্টাসি মুভি নয়; মনের কল্পনাকে বাস্তবতাতে রুপদান করার মুভি “ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড”। জেমস এর সাথে ছোট্ট পিটারের একই সাথে বন্ধুত্ত্বপূর্ণ এবং পিতৃসূলভ সম্পর্ক মনের গভীরে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে। না দেখে থাকলে দেখুন মুভিটা; কল্পনার জগৎ কে নতুন করে দেখতে শিখবেন।


"gently seductive, genuinely tender and often moving without being maudlin" and added, "Depp and Winslet share a rare combination of airiness, earthiness and sharp, wry intelligence."

(Los Angeles Times)

 
পরিচালকঃ জ্যা-পিয়েরে জ্যুয়েট

অভিনয়ঃ আড্রে টাতাও, ম্যাথিউ ক্যাজোভিটস, রাফুস।
IMDB: 8.4

"She Will Change Your Life..."

‘লা ফ্যাবুলিউক্স ডেস্টিন দ্য’অ্যামেলি পলেইন’; ফ্রেঞ্চ উচ্চারন করতে যাদের সমস্যা তারা অনায়াসে এই মুভিকে “অ্যামেলি” বলে ডাকতে পারেন। আগেই বলে রাখি, অ্যামেলি কোনো টাইম পাসিং টাইপের মুভি না বা কোনো থ্রিলিং এক্সপেরিয়েন্সও কাজ করবে না আপনার মধ্যে। এই মুভি দেখতে হলে আপনাকে মুভির মেকিং বুঝতে হবে, মুভিকে ভালোবাসতে হবে। শুধু মুভি ভালোবাসলেই হবে না, সাথে ভালোবাসতে হবে হিউমার, ভালোবাসতে হবে আইরনি এবং এক্সট্রিম ইমোশান। আমার লাইফে দেখা সেরা দশটা মুভির মধ্যে এই মুভির নাম উপরের দিকেই থাকবে। কি নাই এই মুভিতে বলুনতো? আর্ট ডিরেক্সান, সিনেমাটোগ্রাফি, স্ক্রিন প্লে, সাউন্ড ইফেক্ট সব বিশ্বসেরা মানের। পাঁচটা শাখায় অস্কারে নমিনেশান পায় এই মুভি; কিন্তু দুঃখের বিষয় যুদ্ধে হেরে যায়  “আ বিউটিফুল মাইন্ড” ও “দ্যা লর্ড অফ দ্যা রিংস” এর কাছে। এই মুভির দৃশ্যায়ন সম্পর্কে নেদারল্যান্ডের বিখ্যাত ক্রিটিক রেভারহোপ তো বলেই বসেন “এত বেশী সুন্দর দৃশ্যায়ন এই মুভিতে যে মাঝে মাঝে বোরিং হয়ে গিয়েছি”। তাহলে বুঝে নিন সত্যিকারের মুভি লাভারদের জন্য কতটা লোভনীয় এই “লা ফ্যাবুলিউক্স ডেস্টিন দ্য’অ্যামেলি পলেইন”...

ফ্রেঞ্চ পরিচালক জ্যা-পিয়েরে জ্যুয়েট ও আড্রে টাতাও জুটির প্রথম মুভি “অ্যামেলি”। এই জুটির দ্বিতীয় মুভি “আ ভেরি লং এঙ্গেজমেন্ট” নিয়ে আগেই ছোট্ট করে লিখেছি আমি। “অ্যামেলি” মুভির সবচাইতে বড় বৈশিষ্ট হল প্রতিটি ক্যারেক্টারের অসাধারন অভিনয়। নিঃসন্দেহে টাতাও তার জীবনের সেরা অভিনয় করে ফেলেছে এই মুভিতে। “অ্যামেলি” মুভিতে আপনি না পাবেন দুর্দান্ত রোমান্স, না পাবেন শাষরুদ্ধকর এ্যাকশান। নাই কোনো গোলাগুলির শব্দ, অথবা টানটান উত্তেজনা। এই মুভিকে রোমান্টিক কমেডি বলা হলেও এর কমেডি আর অন্য যেকোন কমেডির মধ্য বহু পার্থক্য আছে। জ্যা-পিয়েরে জ্যুয়েট কমেডির সংজ্ঞা নতুন করে চিনিয়েছেন আমাদের সামনে। অট্টহাসি বদলে নিজের অজান্তেই ঠোটের কোনে ফুটে উঠবে এক চিলতে মুচকি হাসি। এই মুভির কাহিনী আসলে বলার কিছু নাই; যারা দেখেন নি তারা দেখলেই বুঝতে পারবেন। তারপরেও আমি কিছুটা ধারনা দেই...

মুভিতে পাবেন আন্ড্রে দ্যুসেলিয়ারের দুর্দান্ত ন্যারেশান যা পুরো মুভি জুরেই আছে। শূরু থেকেই হিউমারের ছড়াছড়ি। প্রথমে অ্যামেলিকে আমরা পাই ছোট্ট একটা মেয়ে হিসেবে যার খেলার সাথী কেউ নাই। তার বাবা এবং মা’কে নিয়ে যথেষ্ট মক করা হয়। কোনো মানুষের মারা যাবার দৃশ্য যে হাসির উদ্দ্রেগ ঘটাতে পারে তা তার মা’এর মারা যাওয়া দেখে বোঝা যায়।  অন্য এক মহিলে আত্মহত্যা করে উচু বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়ে; পরবি তো পর একেবারে অ্যামেলির মা’এর ঘাড়ে। চিৎপটাং। এরপর শুরু হয় অ্যামেলির জগৎ। বড় হয়ে তাকে দেখি প্যারিসের এক ক্যাফের ওয়েট্রেস হিসেবে। রোমান্স বা সেক্সে সে কোনো আনন্দ পায় না। নিজের মত থাকে, মানুষকে তীক্ষ্ণভাবে লক্ষ করে। মোটকথা তার নিজের ভূবন। পিন্সেস ডায়নার শেষ সমাধির দৃশ্য তার মনে এক বড় পরিবর্তন আনে। কালক্রমে খুজে পায় পঞ্চাশ বছর আগে লুকোনো একটা বক্স যার মধ্যে ছোট বাচ্চাদের খেলনা। খুজতে শুরু করে এক মালিককে। এভাবে কাহিনী এগুতে থাকে। অ্যামেলির দুষ্টামি আর তার পোষ্ট ইফেক্ট মজা দেবে যে কাউকে। মাঝে আসে ক্রিষ্টাল ম্যন, বরদোতু, জিনা, জর্জেট আর আসে নিনো যার হবি মানুষের ফেলে দেওয়া পাসপোর্ট সাইজের ছবি কালেকশান করা। বোঝায় যাচ্ছে অ্যামেলি আর নিনোর মধ্যে কিছু একটা হবে। কিন্তু কিভাবে কি হবে? এভাবে বললে আসলে হবে না... দেখতে হবে মুভিটা।

এই মুভির মেকিং নিয়ে কথা বলা উচিত হবে কি না বুঝতেছিনা। শুধু বলা যায় মুগ্ধ হতেই হবে; এতটাই অসাধারন। টাতাও স্থানে অন্য কাউকে অ্যামেলি চরিত্রে চিন্তাই করা যায় না; এতটাই জীবন্ত ছিলো সে এই চরিত্রে। আর সাথে মন ভোলানো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। এই মুভি দেখার পরে কিছু দর্শকের মন্তব্য তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারছি না... J



“Do I look like Amelie?”



“I went to Paris after seeing this movie”

“The Movie is delicious enough to bite a bit more...”