পরিচালকঃ বিল অগাষ্ট

অভিনয়ঃ জেরেমি আয়রনস্‌, মেলেনা লরেন্ত, জ্যাক হাসটন, মার্টিনা জেডেক।
IMDB: 6.6

“Only when you are lost can you truly find yourself”

 অস্কারজয়ী ডেনিশ পরিচালক বিল অগাষ্টের “নাইট ট্রেইন টু লিসবন” মুভির নাম শুনে প্রথমে ভেবেছিলাম এটা “বিফোর সানরাইজ” বা “বিফোর সানসেট” এর মত কোনো টিপিক্যাল রোমান্টিক ফিল্ম। কিন্তু কোথায় কি? সম্পূর্ণ মুভি সাসপেন্স এ ভরপুর। স্লো পেসের মুভি, কিন্তু যদি নিজেকে ডায়ালগগুলোর সাথে সিঙ্ক্রোনাইজ করে নেয়া যায় তবে সময় কোন দিক দিয়ে চলে যাচ্ছে টের’ই পাবেন না।  একজন সুইস প্রফেসারকে ঘিরে মূলত মুভির কাহিনী গড়ে উঠেছে। ভেবে দেখুন তো; ডেনমার্কের পরিচালক, জার্মান ফিল্ম, সুইজারল্যান্ডের প্রফেসার এবং পর্তুগালের পটভূমি... পুরো ইউরোপ’ই যেন ফুটে উঠেছে মুভির ভেতর দিয়ে। আরেকটা কথা, “নাইট ট্রেইন টু লিসবন” এর সিনেমাটোগ্রাফি অসাধারন বললেও ভূল হবে; শিল্পির তুলিতে আঁকা ছবির মত প্রতিটি দৃশ্য। মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়।

এ্যন্তোনিও দ্য অলিভিয়েরা স্যলাজার; ১৯৩২ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল অবধি পর্তুগালের একনায়ক হিসেবে দায়িত্ত্ব পালন করেন। মুসোলিনির মতই তিনিও কিন্তু কখনোই সরাসরি প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। “নাইট ট্রেইন টু লিসবন” মূলত তৎকালীন পর্তুগিজ পটভূমিতেই তৈরী। শুরুতে আমরা দেখি রেমান্ড (জেরেমি আয়রনস্‌) নামের এক সুইস প্রফেসার তারাহুরো করে ব্রিজ দিয়ে হেটে যাবার সময় লাল কোট পড়া এক তরুনি মেয়েকে দেখতে পায়। মেয়েটি তার দৃষ্টিতে পড়ার মূল কারন হলো সে ব্রিজের কিনারাতে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। যাই হোক মেয়েটিকে সে বাঁচাতে সক্ষম হয়। ঘটনাক্রমে মেয়েটির কাছ থেকে তার হাতে এসে পরে একটা বই। বই না বলে বায়োগ্রাফি বলা ভালো। এ্যামেদু (জ্যাক হাসটন) নামের এক বিপ্লবি ডাক্তারের জীবনি। শুরু হয় ফ্ল্যাসব্যাক। এখানে একটা কথা বলে রাখি; ফ্ল্যাসব্যাক এবং আধুনিকতার মিশেল মাঝে মাঝে আপনাকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিতে পারে। কিন্তু প্রথমেই তো বলে দিয়েছি... নিজেকে মিশিয়ে দিন মুভির কাহিনীর সাথে। মেয়েটি বই ফেলে হারিয়ে যায়। প্রফেসার তাকে খুজতে শুরু করে। সুইজারল্যান্ড থেকে পর্তুগালের লিসবন... তাকে থামাতে পারে না। এর মাঝেই একের পর এক আবিস্কার হয় ৭০ দশকের চমকপ্রদ সব কাহিনী। এ্যামেদু’র বিপ্লব, সহিংশতা, ষড়যন্ত্র সাথে এস্টেফানিয়ার (মেলেনা লরেন্ত) ভালোবাসা... পরিচালকের মেধা এবং সৃষ্টিশীলতার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে সবখানে। এ্যামেদু মূলত কে এটা আপনাকে মুভি দেখে খুজে বের করতে হবে। দেখুন মুভিটা, ঘুরে আসুন ৭০ দশকের পর্তুগাল থেকে। মুভির ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক মন ছুয়ে যায়। জেরেমি আয়রনস্‌ এবং মেলেনা লরেন্ত অসাধারন অভিনয় প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। মার্টিনা জেডেক মুগ্ধ করেছেন বারবার। রেটিং যা খুশী হোক, আমার খুব বেশী ভালো লেগেছে “নাইট ট্রেইন টু লিসবন”। যারা ড্রামাটিক সাসপেন্সের স্বাদ নিতে আগ্রহি তাদের জন্য এই মুভি রিকমেন্ড হিসেবে থাকল।

 
পরিচালকঃ পল ভ্যারহোভেন

অভিনয়ঃ ক্যারি ভ্যান হথেন, সেবাস্তিয়ান কোচ, থম হফম্যান।
IMDB: 7.8

“In this movie, everything has a shade of grey. There are no people who are completely good and no people who are completely bad. It's like life. It's not very Hollywoodian”

“সোলজার অফ অরেঞ্জ” খ্যাত ডাচ পরিচালক পল ভ্যারহোভেনের “ব্লাক বুক” (ডাচ নাম Zwartboek) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপরে নির্মিত ডাচ মুভি। মুভিটি রাচেল স্টেইন/ এলিস দে ভ্রাইস (ক্যারি ভ্যান হথেন) নামক এক জ্যুইস মেয়েকে ঘিরে তৈরী হলেও আমার কাছে মুল আকর্ষন ছিলো এই মুভিতে সেবাস্তিয়ান কোচের উপস্থিতি। কোচের অভিনিত “দ্যা লাইভস অফ আদারস” অতি প্রিয় মুভিগুলোর মধ্য একটি। মুভিটি সত্য কাহিনী অবলম্বনে তৈরী বলে দাবী করলেও এখানে আসলে অনেকগুলো সত্য ঘটনা একত্র করা হয়েছে। মুভিটি যখন মুক্তি দেওয়া হয়, তখন এটি নেদারল্যন্ডের ইতিহাসের সবচাইতে বেশী বাজেটের ছবি ছিলো। উপরে যে কোটেশান দেওয়া তা পরিচালকের নিজের এবং এইটা যে কতটা সত্য তা শুধু মুভিটা দেখলেই বোঝা সম্ভব। ট্র্যাজেডির বাস্তব সংজ্ঞা পাওয়া যাবে মুভিটি দেখলে। সাথে মাঝে মাঝে কপালে ভাজ পড়বে ষড়যন্ত্র এবং অবিশ্বাসে।

মুভির পুরোটাই ফ্লাসব্যাক। শুরুতেই আমরা দেখতে পাই ১৯৫৬ সালের ইজরাইল। রুনি নামের এক ডাচ মহিলা তার স্বামীর সাথে ইজরাইলে আসলে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় যুদ্ধের সময়ে তার পরিচিত রাচেলের সাথে। রুনির প্রস্থানের পরে রাচেল কাছেই নদীর তীরে বসে অতীতের কথা চিন্তা করতে থাকে, ১৯৪৪ এর নেদারল্যান্ডের কথা। এইক্ষেত্রে মুভির শেষে রাচেল বেঁচে থাকবে নি মারা যাবে এই উত্তেজনা থেকে আমরা বঞ্চিত হই।

মুভিতে আমরা রাচেল কে একজন গায়ীকা হিসেবে পাই। নাজীদের কাছ থেকে লুকাতে সে যে ফার্ম হাউজে আশ্রয় নেয় তা ভূলক্রমে আমেরিকান শেল দ্বারা ধুল্যিস্যাৎ হয়ে যায়। রাচেল রব নামের স্থানীয় এক ছেলের সাহায্যে পালাতে সক্ষম হয়, দেখা করে স্মাল নামের এক উকিলের সাথে এবং বাবার গচ্ছিত কিছু টাকা নিয়ে ভ্যান গেইন নামক একজনের সাহায্যে দক্ষিনে পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু পথে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সে তার মা, বাবা, ভাই এবং রব – সবাইকে হারায়। নিজে বেঁচে থাকলেও সেটা ছিলো নেদারল্যন্ডের নাজী অধ্যুষিত এলাকা।

এরপর থেকে নাটকীয়তা বাড়তে থাকে। রাচেল এরপর এলিস দে ভ্রাইস নাম নিয়ে স্থানীয় নাজী প্রতিরোধকারী সংগঠনে গার্বেন কুপার এর অধিনে যোগদান করে। সে কাজ শুরু করে ডাক্তার হ্যান্স এ্যকারমেন্স এর সাথে। ট্রেনে তার সাথে পরিচয় হয় নাজী এস. ডি. অফিসার লুড্যিক ম্যুন্তয্যের (সেবাস্তিয়ান কোচ) সাথে। শুরু হয় প্ররোচনা। রাচেল নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করে এস. ডি. হেডকোয়ার্টারে আসতে সক্ষম হয়। সৃষ্টি হয় অনেকের সাথে শত্রুতার, হ্যান্স এ্যকারমেন্স এর সাথে পরিকল্পনা করে এস. ডি. হেডকোয়ার্টারে প্রভাব সৃষ্টি আর লুড্যিক ম্যুন্তয্যের ও রাচেলের কারাগার বন্দি হওয়া – পরিচালক প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। আসলে এরপর অনেক কাহিনী টানটান উত্তেজনার মধ্যে এগিয়ে চলে যা বলে দিলে মুভির মূল মজাটাই নষ্ট হবে।

কথাতে আছে ‘শেষ হইয়াও হইলনা শেষ’। এই মুভিতে যখনি মনে হয়েছে এবার শেষ হবে, তখনি আলাদা মোড় নিয়েছে। মুভি শেষ না হওয়া অবধি আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না যে মুল ষড়যন্ত্র আসলে কি ছিলো। মুভিতে এস. ডি. অফিসার লুড্যিক ম্যুন্তয্যে এর মধ্য ভালোবাসাটাই বেশি পাবেন ঘৃনার চাইতে যদিও সে নাজী অফিসার। ক্যারি ভ্যান হথেন ও সেবাস্তিয়ান কোচের অনবদ্য অভিনয় ভালো লাগবে সবার। কিছু ক্ষেত্রে সেক্সচ্যুয়ালিটি এবং ভায়োলেন্স ছিলো অতিরিক্ত। তবে ওয়ার্ল্ড ওয়ারের মুভি যদি পছন্দ করেন তাহলে এই মুভি দেখা বাধ্যতামূলক।