পরিচালকঃ ক্লিন্ট ইষ্টউড
অভিনয়েঃ শন পেন, টিম রবিন্স, কেভিন বেকন
IMDB : 8.0

We bury our sins, we wash them clean.

জার্মানিতে একটা কথা প্রচলিত আছে; "প্রতিশোধের নেশা অনেক সময় একটা সাধারন সত্যিকেও অনেক বড় মিথ্যাতে পরিনত করতে পারে"। অবাধ পাপ, ব্যাথা ও রাগ জীবনে সবচাইতে বড় দূর্ভোগ বয়ে আনে। রূপালি পর্দাতে প্রতিহিংসা বা নিয়ন্ত্রনহীন ভুল সিদ্ধান্ত নতুন কোনো বিষয় না; তবে ওয়েষ্টার্ন মুভির জীবন্ত কিংবদন্তী ক্লিন্ট ইষ্টউড পরিচালিত "মিষ্টিক রিভার" এই বিষয়ে অন্য মুভিগুলোকে নিঃসন্দেহে হার মানিয়েছে। এক অর্থে বলা যায় মিষ্টিক রিভারের প্রতিটি চরিত্র এলিজাবেথান পিরিয়ডের নাটকের মত ভাগ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত; অন্য অর্থে তারা একচক্ষু বিশিষ্ট পাখির মত যারা শূধু যেদিকটা চোখে পড়ে সেদিকেই ওরার চেষ্টা করে। ডেনিস লেহ্যান এর বেস্ট সেলার বই অবলম্বনে করা "মিষ্টিক রিভার" মুভির চিত্রনাট্য ব্রায়ান হেলগেল্যান্ড অসাধারনভাবে তৈরী করেছেন; সাথে ক্লিন্ট ইষ্টউডের নির্দেশনা আর শন পেন, টিম রবিন্স, কেভিন বেকনদের উপস্থিতি... যতটা আশা নিয়ে বসেছিলাম তার চাইতে বেশী পূরণ হয়েছে বলব। ২০০৩ সালের মুভি মিষ্টিক রিভার; টিম রবিন্স তার "শশাঙ্ক রিডেম্পসন"র জন্য ততদিনে বিখ্যাত আর শন পেন "আই এ্যাম স্যাম" মুভির জন্য খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করছেন। এই মুভিতে সত্যি কথা বলতে দুইজন মিলে ইতিহাসই সৃষ্টি করে ফেলেছেন। কি করেছেন তারা? ১৯৫৯ সালের পর একমাত্র মুভি এই "মিষ্টিক রিভার" যেখানে শন পেন সেরা অভিনেতা এবং টিম রবিন্স সেরা সহ অভিনেতা হিসেবে অস্কার জয় করেন। সেরা মুভি বা সেরা ডিরেক্টর হিসেবেও হয়ত পেতে পারত; কিন্তু কি করবে... "লর্ড অব দ্য রিংস" এর সাথে লড়তে হয়েছে যে!!

ভাগ্য কখন মানুষকে ছেড়ে যায়? অথবা নিয়তি কখন খুব বেশী নির্মম হয়ে ধরা দেয়? যুক্তি, বুদ্ধি, পরামর্শ বা বিবেক মাঝে মাঝে বড্ড মূল্যহীন হয়ে পড়ে। চলুন সামান্য একটু চোখ বুলিয়ে আসি মুভির কাহিনী থেকে। জিমি, ডেভ আর সন নামের তিন বন্ধুর রাস্তার পাশে কাচা সিমেন্টে নাম লেখা দিয়ে কাহিনী শুরু। ডেভ হঠাৎ করেই ভায়াবহ ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। এরপরই কাহিনী ২৫ বছর পার হয়ে যায়। সবাই নিজ নিজ প্রফেশনে; ডেভ ভুলতে পারে না তার ছোটবেলার নির্যাতনের কথা। মাঝে মাঝে তাকে এটা পাগল করে ফেলে। এরই মাঝে খুন হয় জিমির মেয়ে, দায়িত্ব এসে পড়ে সন এর কাধে। প্রকৃতির খেয়ালের বশেই তিনজন আবার একত্রিত হয়। কিন্তু জিমির মেয়ের খুনি কে? ট্যুইষ্ট, ট্যুইষ্ট আর ট্যুইষ্ট এ পূর্ণ মুভি "মিষ্টিক রিভার"।  জানি না কেনো, আমার কাছে কিছুটা "প্রিজনার্স" মুভির মত লেগেছিলো এই অংশটা দেখার সময়।

"মিষ্টিক রিভার"কে আমরা ট্র্যাজেডি বলতে পারি। একটা সফল ট্র্যাজেডি তার শক্তি সঞ্চয় করে দর্শককে কিছু দুঃখ, কিছুটা ভাগ্যের খেলা আর কিছু চমক দিয়ে যা মানুষের মনে স্বভাবতই আঘাত করবে। এই দিক থেকে ইষ্টউড শতভাগ সফল হয়েছেন বলা চলে। চমকের পর চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি। এইরকম ট্যুইষ্টপূর্ণ মুভিগুলোতে সাধারনত কিছুটা আন্দাজ করা যায় যে প্রকৃত খুনি কে; কিন্তু এই একটা মুভি যেখানে আমি সম্পূর্ণ ব্যার্থ হয়েছি। শন পেন বাবার ভূমিকাতে অসাধারন অভিনয় করেছেন; আর টিম রবিন্স এর অভিনয় নিয়ে কথা বলার প্রশ্নই ওঠে না। আর একটা কথা, মুভির নামকরনের সার্থকতা আগেই খুজতে যাবেন না; শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। পার্ফেক্ট ক্রাইম থ্রিলার মুভিগুলোর মধ্যে "মিষ্টিক রিভার"কে আমি সবসময় সেরা পাঁচের মধ্যেই রাখব। "দ্যা সান" পত্রিকার মতে এটা কিন্তু ইষ্টউডের সেরা পরিচালিত মুভি। সুতরাং যারা দেখেননি; আর দেরি করবেন না। জলদি দেখে ফেলুন গত দশকের অন্যতম সেরা এই মাষ্টারপিস।




Leave a Reply.