পরিচালকঃ ফ্লোরিয়ান হ্যাকেল ভন ডোনার্সমার্ক

অভিনয়ঃ মার্টিনা জেডেক, সেবাস্তিয়ান কোচ, উলরিচ মোহ।
IMDB: 8.5

“Before the fall of the Berlin Wall, East Germany's Secret Police Listened to Your Secrets”

২০০৬ সালে ৭৯ তম অস্কার এবং ৬৪ তম গোল্ডেন গ্লোব এওয়ার্ডে বেষ্ট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম হিসেবে পুরস্কার পাওয়া “দ্যা লাইভস্‌ অফ আদারস্‌” জার্মান পরিচালক ফ্লোরিয়ান হ্যাকেল ভন ডোনার্সমার্কের প্রথম পরিচালিত মুভি। ১৩৭ মিনিটের টানটান উত্তেজনাকর থ্রিলার মুভিটি জার্মান ফিল্ম এওয়ার্ডে ১১ টি শাখায় নমিনেশান ও ৭ টি শাখায় জয় পায় যা এখন অবধি রেকর্ড হিসেবেই আছে। পূর্ব জার্মানির সমাজতান্ত্রিক পটভূমিতে নির্মিত মুভিটি মূলত মানুষের বাক-স্বাধীনতা হরনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর গল্প। বার্লিন দেয়াল ভাঙ্গার ১৭ বছর পরে মুভিটি তৈরী; কিন্তু এটিই এই বিষয়ের উপরে নির্মিত প্রথম সিরিয়াস টাইপের মুভি। IMBD এর সেরা ২৫০ এর মধ্যে এই মুভির অবস্থান ৬০ তম হলেও আমার দেখে সেরা ১০ টি মুভির মধ্যে থাকবে “দ্যা লাইভস্‌ অফ আদারস্‌”।

একবার ভাবুন তো; আপনার ঘরের প্রতিটি কোনাতে মাইক্রফোন লাগানো, আপনি কার সাথে কি কথা বলছেন তার পুরোটাই সরাসরি শুনছে অন্য কেউ কিংবা আপনি বাসার বাইরে পা দেয়া মাত্রই আপনার পেছনে ফেউ লেগে যাচ্ছে।। এমনকি আপনার চরম ব্যাক্তিগত বিষয়’ও উচ্চস্তর থেকে পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে... কেমন হবে বিষয়টা? ঠিক এমনটি’ই ঘটেছে গ্রেগ ড্রেম্যান (সেবাস্তিয়ান কোচ) ও তার স্ত্রী ক্রিস্টিয়া স্যীল্যান্ড (মার্টিনা জেডেক) এর জীবনে। ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব জার্মানির (Germar Democratic Republic বা সংক্ষেপে GDR)  ক্ষমতাতে ছিলো ‘stasi’ নামের এক গুপ্ত পুলিশ বাহিনী। ১৯৯০ সালের অক্টবারে GDR এর পতনের সাথে সাথে তাদের ক্ষমতাও চলে যায়। এই stasi কে পৃথিবীর সবচাইতে কার্জকর এবং সবচাইতে ভয়ংকর সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স হিসেবে এখনো মনে করা হয়। তাদের কাজই ছিলো নুন্যতম সন্দেহভাজনদের’ও চোখে চোখে রাখা এবং ভিন্ন মতাদর্শের মানুষদের খুজে বের করে অমানবিক অত্যাচার করে মারা। এই stasi এর এক এজেন্ট জার্ড উইস্লার (উলরিচ মোহ)। তার দায়িত্ত্ব পরে গ্রেগ ড্রেম্যান এর উপরে নজর রাখা। চরম দায়িত্ত্ববান মানুষ এই উইস্লার; সমাজতান্ত্রিক আদর্শের অন্ধ ভক্ত। সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে সে এতটাই ভয়ঙ্কর যে বলা হয় তার নজরদারিতে আসলে ভালো মানুষের’ও রক্ষা নাই। আস্তে আস্তে নজরদারির মাধ্যমে সে ঢুকে পড়ে ড্রেম্যান এর জীবনে। অত্যান্ত প্রতিভাবান লেখক এই ড্রেম্যান; সরকার বিরোধী যেকোনো কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। কিন্তু আসলেই কি তাই? দায়িত্ত্ব এবং নৈতিকতার মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। আর এখানেই মূল কাহিনির শুরু।

যাই হোক; এই মুভির কাহিনী এমন’ই যে দুই লাইনেই পুরোটা বলে দেয়া সম্ভব। কিন্তু তাতে আর মুভি দেখার দরকার হবে না। সেবাস্তিয়ান কোভের অভিনয় আমার এতটাই প্রিয় যে তার প্রতিটি মুভি আমি কালেকশান করার চেষ্টা করেছি। এখানেও তার ব্যাতিক্রম নয়। মার্টিনা জেডেক ৪৮ বছর বয়সেও এত আকর্ষনীয় কিভাবে তা চিন্তা করেছি বহু বার। আর উলরিচ মোহকে ছাড়া উইস্লার চরিত্র কোনভাবেই মনে হয় ফুটে উঠত না। ঠান্ডা মাথাতে দেখতে হবে এই মুভি; এটা কোনো ওয়ার বা এ্যাকশান মুভি না, একেবারে ঠান্ডা থ্রিলার বা ড্রামা। তবে টেনশানে ফেলে দেবে অনেক জায়গাতেই।  জার্মান মুভির প্রতি কেন জানি দিনে দিনে খুব বেশী পরিমানে আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি; অসম্ভব ভালো লাগে এদের চিত্রনাট্যগুলো। মনে পড়ে না “দ্যা লাইভস্‌ অফ আদারস্‌” দেখে কেউ কোনো নেগেটিভ কমেন্ট করেছে; যদি না দেখা হয়ে থাকে তবে বলব অনেক বেশী দেরি করে ফেলেছেন। সুতরাং আর দেরি না করে ঘুরে আসুন ১৯৮৪ সালের পূর্ব জার্মানি থেকে।


আরেকটি কথা; ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারন জার্মান নামগুলোর বাংলা উচ্চারন সঠিকভাবে করতে পেরেছি কি না তা আমি নিশ্চিত নই।




Leave a Reply.