পরিচালকঃ কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়

ওপার বাংলার কমার্শিয়াল মুভি গুলো কেমন তা বলতে পারব না তবে অন্যধারার চলচ্চিত্রগুলো যে আসলেই অন্যকিছু করার চেষ্টা করছে তা বোঝা যায়। একের পর এক মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে বিখ্যাত সব উপন্যাস অবলম্বনে করা চলচ্চিত্র। ফেলুদা, কাকাবাবু, টেনিদা, প্রফেসর শঙ্কু সবাই তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন বড় পর্দায়। এবার হাজির হতে যাচ্ছেন শঙ্কর রায় চৌধুরী; বাংলার প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস 'চাঁদের পাহাড়' অবলম্বনে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় তৈরী করেছেন টলিউডের সর্বোচ্চ বাজেটের এই চলচ্চিত্রটি। আসলে এখন পর্যন্ত যত বাংলা চলচ্চিত্র হয়েছে, তাদের সকলের মধ্যে চাঁদের পাহাড়-এর বাজেট সর্বোচ্চ। প্রায় পনেরো কোটি রুপি ব্যায়ে নির্মিত এই মুভিতে শঙ্করের ভূমিকাতে অভিনয় করেছেন টলিউডের জনপ্রিয় কমার্শিয়াল মুভির নায়ক দেব। তবে ট্রেলার দেখে যা বুঝলাম নিজেকে একেবারেই অন্যভাবে উপস্থাপন করেছেন তিনি এই মুভিতে। একটা কথা না বললেই না; দেব কোনো পারিশ্রমিক নেন নি এই মুভিতে অভিনয়ের জন্য। উড়ো চিঠি ও মেঘে ঢাকা তারা[৫] চলচ্চিত্রদ্বয়ের জন্য বিখ্যাত পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এই মুভির সম্পুর্ণ শুটিং করেছেন আফ্রিকাতে। এই ছবির জন্য বেশকিছু আকর্ষণীয় স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকাসহ উগান্ডায়ও এর শ্যুটিং করা হয়েছে। এছাড়া কালাহারি মরুভূমিতে শ্যুটিং করা হয়েছে। এখানে দিনের বেলা তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রী সেলসিয়াস হয়। ১৪ই নভেম্বরে ট্রেলার মুক্তির পরে ৩ দিনের মধ্যেই এক লক্ষেরও বেশি মানুষ ট্রেলার ইউটিউবে দেখে, যা বাংলা চলচ্চিত্র জগতে একটি রেকর্ড। ছবিটি এবেলা পত্রিকায় রিভিউ ৮/১০ পেয়েছে। একইদিনে মুক্তিপ্রাপ্ত ধুম থ্রি একই স্থানে রিভিউতে ৬.৫/১০ পায়।



দেব বলেন, "এরকম চলচ্চিত্র আর কখনই হবে না কারণ চাঁদের পাহাড়ের মত অভিযান কাহিনী বাংলায় আর দুটো নেই"। বলিউডের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ তরুণ আদর্শ বলেন, “আমরা মুম্বইতে বলাবলি করছি এটা বাংলার ‘কামিং অফ এজ’ ফিল্ম। শাহরুখ, হৃতিকের যে কোনও ছবির সঙ্গে তুলনা করা যায় ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের। শুধু একটাই আবেদন আমার, এই ছবিটা ইন্টারন্যাশনালি ভাল করে রিলিজ করুন প্রযোজকেরা”। প্রথমে দেব এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে এই দুইজনের একজনকে চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রের জন্য নির্বাচন করা হবে বলে ঠিক হয়েছিল। পরে পরিচালক ও প্রযোজক বলেছেন, প্রথম থেকেই তাদের ইচ্ছা ছিল দেবকে নেবার। কারণ দৃশ্যায়ণের জন্য এরকম স্পোর্টি দেহই তাদের চাই। উপন্যাসে আছে, শঙ্কর সাঁতার, পাহাড় চড়া, ঘোড়ায় চড়তে জানে। তাই তাকেই এই চরিত্রে নির্বাচন করা হয়। শঙ্করকে এছাড়াও সিংহের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। তাই দেবকে অনেক ওজন কমাতে হবে, কারণ শেষদিকে শঙ্কর মরুভূমিতে প্রায় উপোস করেই ছিল। যেহেতু কাহিনীর প্রেক্ষাপট আফ্রিকায়, তাই অনেক আফ্রিকানকে অভিনয়ের জন্য নিতে হয়েছে। ডিয়েগো আলভারেজ চরিত্রে কে থাকবেন এই নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনার শেষে জেরার্ড রুডলফকেই নেয়া হয়। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত সঙ্গিত পরিচালনা করেন।

"পাহাড়ের খুব ধারে আমি দাঁড়াচ্ছি, নিচে গভীর খাদ। আমি নিজে দাঁড়ালে ভয় করছে না। অন্য কেউ দাঁড়ালে মনে হয়েছে, ও যদি পড়ে যায়! এই ব্যাপারটা বারবার হয়েছে। রক ক্লাইম্বিং, হাতি, সিংহ, ব্ল্যাক ম্যাম্বার সাথে সিকোয়েন্সগুলো দেব নিজে করছিল। আমি খুবই ভয় পেয়ে যাচ্ছিলাম। একটা সময় খুব রেগেও গিয়েছিলাম। বেশ মন কষাকষিও হয়ে গিয়েছিল। আমি ওকে বলতাম, রিয়েলিজমের জন্য নিজে স্টান্ট করাটা ভাল। তোমার পিছনে হাতি দৌড়চ্ছে। আমরা তোমাকে বাহবা দিচ্ছি। কিন্তু যদি তোমার কিছু হয়, তাহলে বাংলার মানুষ আমার পিছনে ছুটবে। আর বাহবা যে পাব না সেটা বলাই বাহুল্য!"

—কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, চাঁদের পাহাড়ের বিপজ্জনক অংশের শ্যুটিংয়ে দেবের বিষয়ে কথা বলার সময়।


 
পরিচালকঃ নোরা ইফ্রন

অভিনয়ঃ টম হ্যাংকস, মেগ রায়ান
IMDB: 6.3

“Someone you pass on the street may already be the love of your life.......”

একবার মনে করুন তো আপনি যাকে ভালোবাসেন তার সাথে আপনার ই-মেইল চ্যাট হয় কিন্তু তাকে আপনি সরাসরি চিনেন না; অথচ আপনার সাথে তার প্রতিদিন দেখা হয়। সে আপনার সরাসরি ব্যাবসায়ী শত্রু এবং শুধুমাত্র না চেনার কারনে তার সাথে আপনার বিবাদ লেগেই থাকে। কি? ঠোট চিমটানো শুরু করলেন? ঠিক এমনই এক মজার কাহিনী আপনি পাবেন নোরা ইফ্রন পরিচালিত রোমান্টিক কমেডি “ইউ হ্যাভ গট মেইল” মুভিতে। অভিনয়ে আছেন চিরতরুন টম হ্যাংকস এবং আমেরিকান রোমান্টিক কমেডি কুইন মেগ রায়ান। মূলত মুভিটি ১৯৪০ সালের “দ্যা শপ এরাউন্ড দ্যা কর্নার” এর রিমেক। “ইউ হ্যাভ গট মেইল” এর আগেও আরেকটি রিমেক বের হয়েছিলো; ১৯৪৯ সালে জুডি গারল্যান্ড অভিনীত “ইন দ্যা গুড ওল্ড সামারটাইম”। টম হ্যাংকস এবং মেগ রায়ান কিন্তু রোমান্টিক কমেডি জুটি হিসেবে ভীষণ সমাদৃত। তারা তিনটি মুভিতে জুটি হিসেবে অভিনয় করেছেন – “জো ভার্সেস দ্যা ভলকানো”, “ইউ হ্যাভ গট মেইল” এবং “স্লিপলেস ইন সিয়াটল”। প্রতিটি মুভি’ই চরম দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।

ক্যাথলিন ক্যালি (মেগ রায়ান) এর সম্পর্ক ফ্রাঙ্ক (গ্রেগ কিনার) এর সাথে আর জো ফক্স (টম হ্যাংকস) এর সম্পর্ক প্যাট্রিসিয়া ( পার্কার পোজি) এর সাথে। কিন্তু ক্যাথলিন ও ফক্সের পরিচয় হয় AOL ই-মেইল এ। কেউ কাউকে দেখে নি; আসল নাম’ও জানে না। ক্যাথলিন ‘শপ গার্ল’ এবং ফক্স ‘NY152’ নামে একজন আরেকজনের কাছে মেইল আদান-প্রদান করে। এ তো গেলো ভার্চুয়াল লাইফের কথা। বাস্তবে ফক্স নিউ ইয়র্কের একদম নতুন বিশাল বই এর দোকান ‘ফক্স বুকস্‌’ খুলতে যাচ্ছে। আর ক্যাথলিনের ওই রাস্তার’ই মোড়ের ছোট বই এর দোকানের নাম ‘দ্যা শপ এরাউন্ড দ্যা কর্নার’ যেটা তার মা’এর ছিলো।  যাই হোক; একদিন ফক্স ঘটনাক্রমে ‘দ্যা শপ এরাউন্ড দ্যা কর্নার’ এ আসে। পরিচয় হয় ক্যাথলিনের সাথে। জানতে পারে ক্যাথলিনের ‘ফক্স বুকস্‌’ এর প্রতি বিরূপ মনোভাব। ব্যাস শুরু হয় তাদের মধ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ওইদিকে তারা কিন্তু চ্যাটিং চালিয়েই যাচ্ছে না জেনে। মজার মজার সব কান্ড ঘটাতে থাকে তারা একে অপরকে ছাড়িয়ে যাবার জন্যে। কিন্তু সকল চেষ্টা সত্ত্বেও ‘দ্যা শপ এরাউন্ড দ্যা কর্নার’ ডুবতে বসে। এভাবেই এগিয়ে যায় মুভির কাহিনী। তাদের পরিচয় কিভাবে ফাস হবে? তাদের সম্পর্ক কেমন থাকবে? এর বেশী আর না বলি; চট করে দেখে ফেলুন অসাধারন এই মুভি। সময় নষ্ট হবে না, এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন।

রোমান্টিক মুভি লাভারদের সবসময়ের প্রিয় মুভি “ইউ হ্যাভ গট মেইল”। সে সময়ে ইন্সট্যান্স চ্যাট অপশন না থাকলেও এই মেইল আদান প্রদানের বিষয়টা কিন্তু বেশ মজার ছিলো; অনেকটা চিঠি আদান প্রদানের মত। মুভিতে তরুন টম হ্যাংকস ও মেগ রায়ান এর প্রানবন্ত উপস্থিতি চোখে পরার মত।  সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের এই মুভি না দেখে থাকলে চরম মিস করবেন।  

 
পরিচালকঃ হুয়ান সোলানেস

অভিনয়ঃ জিম স্টারগেজ, কার্স্টেন ডাচ, টিমোথি স্পল।
IMDB: 6.3

"Two worlds. One future..."

প্রথমত সায়েন্স ফিকশান আর রোমান্সের মিশেল, দ্বিতীয়ত বড় কাষ্টিং... যত বড় প্রত্যাশা নিয়ে বসেছিলেম তার চাইতেও বেশি হতাশ হলাম আর্জেন্টাইন পরিচালক হুয়ান সোলানেস এর “আপ-সাইড ডাউন” দেখে। অনেক অনেক প্রশ্নের কোনো সদুত্তর ছাড়াই শেষ হয়ে গেলো মুভিটি। রটেন টমাটোর মতেঃ

A movie that will surely wow audiences with its awesome visuals but floor them with its terrible storytelling.

টিপিক্যাল হলিউডিয়ান মুভি না “আপ-সাইড ডাউন”; ফ্রেঞ্চ - কানাডিয়ান মুভি। দুই মধ্যাকার্ষন শক্তি সম্পন্ন সম্পন্ন পৃথিবীতে দুই ধরনের লাইফ সিস্টেম; উপরের স্তরের মানুষ আর নিম্ন স্তরের মানুষ। কেউ কারো সাথে মিশতে পারবে না। একেবারে আলাদা গ্রাভিটি সম্পন্ন এই দুই প্রকারের মানবজাতীর মধ্য সব কিছুতেই পার্থক্য থাকা স্বত্তেও এ্যাডাম আর ইডেন এর মধ্য ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। বাংলা মুভিতে আমরা যেমন দেখি গরিব ঘরের ছেলের সাথে বড়লোকের ঘরের মেয়ের সম্পর্ক হয়... অনেকটা সে রকম। তবে এটা সত্যি; মুভির ভিজ্যুয়াল অসাধারন। সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক মন ছুয়ে যায়। অনেক প্রশ্নের অবতারনে করলেও এটা মাথায় রাখা বাধ্যতামূলক যে আপনি ফিকশানের জগতে আছেন; এখানে ফ্যাক্ট খুজতে যাওয়া মোটেও ঠিক হবে না। বেশ কিছু মজার দৃশ্য আমরা পেয়েছি এই মুভিতে। বিশেষ করে এ্যাডাম (জিম স্টারগেজ) আর ইডেন (কার্স্টেন ডাচ) এর গ্রাভিটি শুন্য রোমান্স আমাকে যথেষ্ট বিনোদন দিয়েছে। জানি না কেন, এই মুভি দেখার সময় “ইন্সেপসান” এর কথা বারবার মনে হচ্ছিলো। আধুনিক যুগের রোমিও ও জুলিয়েট বলা যায়, যেখানে এ্যান্টাগনিষ্ট হলো ট্রেন্সওয়ার্ল্ড। জিম স্টারগেজ এবং কার্স্টেন ডাচের অভিনয় নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না; বরাবরের মতই অসাধারন। তবে ওই যে বললাম; মুভি শেষ হবার পরেও অতৃপ্ত থেকে যাবেন।