পরিচালকঃ জন হাসটন

অভিনয়ঃ হাম্ফ্রে বোগার্ড, টিম হল্ট, ওয়াল্টার হাসটন।
IMDB: 8.4

They sold their soul for the treasure of the Sierra Madre…

জন হাসটনের চিত্রনাট্য এবং পরিচালনায় আমেরিকান মুভি “দ্য ট্রেজার অফ সিয়েরা মাদ্রে” আমেরিকার বাইরে শুটিং হওয়া প্রথম মুভিগুলার মধ্য অন্যতম। পরিচালক হাসটন এই মুভির আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সক্রিয় ভুমিকা রেখেছিলেন তার অনেক ডকুমেন্ট্রির সাহায্যে। আর হাম্ফ্রে বোগার্ট ততদিনে বিখ্যাত হয়ে গেছেন হলিউডে তার “কাসাব্লাংকা” মুভির জন্য। ফলে এই জূটির সংমিশ্রন স্বভাবতই দর্শকদের তুমুল আগ্রহের সৃষ্টি করেছিলো। তারা নিরাশও হননি। “দ্য ট্রেজার অফ সিয়েরা মাদ্রে” হলিউডের সর্বকালের সেরা দশটি ক্লাসিকের মধ্যে যেকোনো টপচার্টে স্থান নিতে সক্ষম হয়েছে। মজার বিষয় হলো এই মুভিতে হাওয়ার্ড নামের চরিত্রে পরিচালকের বাবা ওয়াল্টার হাসটন অভিনয় করেছেন এবং বাবা, ছেলে দুইজন’ই অস্কার লাভ করেছেন।

১৯২০ সালের মেক্সিকান পটভূমিতে তৈরি এই মুভিতে অনেকটা ওয়েষ্টার্ন মুভির স্বাদ পাওয়া যায়। লোভ আর এ্যডভেঞ্চারের সংমিশ্রন ঘটেছে মুভিটিতে। শুরুতে দেখা যায় ডবস (হাম্ফ্রে বোগার্ট) আর কার্টেন (টিম হল্ট) কে শুধু খাবারের পয়সা জোগার করার জন্য মানুষের কাছে হাত পাততে। তারা দুইজন’ই ম্যকর্মিক নামক এক অসৎ লোকের মাধ্যমে প্রতারিত হয়। ভাগ্যক্রমে মেক্সিকোর টেম্পিকো নামক স্থানে তাদের পরিচয় ঘটে হাওয়ার্ড (ওয়াল্টার হাসটন) নামের এক বৃদ্ধ রত্নসন্ধানির। হাওয়ার্ড’ই তাদের বলে সিয়েরা মাদ্রে পাহাড়ে থাকা স্বর্ণের কথা। মূলত কাহিনী এখানেই শুরু।

যাত্রা শুরু হয় ট্রেন দিয়ে। মাঝেই তৎকালিন সময়ে বেড়ে ওঠা দস্যুদের হামলা, হবস এর সুনিপুন পিস্তল চালানো। হাওয়ার্ডকে আমরা পাই সবচাইতে কঠিন আর বুদ্ধিমান হিসেবে। সে এই মুভির অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ কারন সে ছাড়া সোনার খোজ আর কেও জানে না। তার কথা থেকেই বোঝা যায় সে এখানে আগেও এসেছে (I know what gold can do to men’s soul) । একসময় তারা সিয়েরা মাদ্রেতে পৌছায়। স্বন্ধান পায় স্বর্ণের গুঁড়ার। নাটকীয় হয়ে ওঠে পরিবেশ।

আমরা এইসময় ডবসকে এন্টিহিরো হিসেবে দেখতে পাই। লোভ শীঘ্রই বাসা বাধে হবস এর মনে, সততা এবং বিশ্বাস আস্তে আস্তে লোপ পায়। আটমাস তারা থাকে পাহাড়ে। গুপ্তধন সম্পূর্ণ কব্জা করার সাথে সাথে তাদের মনে ভয় বাসা বাধে। ডবস এর মনে সবসময় একটা সন্দেহ ঘুরতে থাকে- কার্টেন আর হাওয়ার্ড বোধহয় তাকে খুন করে তার ভাগের স্বর্ণ লুট করে নেবে। হাওয়ার্ড স্থানীয় গ্রামের এক অসুস্থ শিশুকে বাচিয়ে তুলে তাদের কাছে হিরো পরিচয় পায়। দস্যুদের আক্রমন, ডবস কর্তৃক কার্টেন কে গুলি, দস্যু কর্তৃক ডবস কে গুলি, হাওয়ার্ডের অনুসারীদের মাধ্যমে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া... শেষ অবধি টানটান উত্তেজনা আর ভাগ্যের নির্মম খেলা - এভাবেই কাহিনী এগিয়ে যায়।  শেষে কার ভাগ্যে সোনা জোটে বা আদৌ জোটে কি না তা জানতে হলে মুভির শেষ না দেখে উপায় নাই।

ছেলে জন হাসটন এবং বাবা ওয়াল্টার হাসটন দু’জন’ই অস্কার লাভ করেন যথাক্রমে শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্বঅভিনেতা হিসেবে। শ্রেষ্ঠ মুভি হিসেবেও এটি অস্কারে নমিনেশান পায়। বরাবরের মতই বোগার্ড তার অভিনয় দিয়ে দর্শক হৃদয় জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক স্ট্যনলি কুবরিক “দ্য ট্রেজার অফ সিয়েরা মাদ্রে” মুভিটিকে তার পছন্দের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুভিগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রেখেছেন। আমেরিকার  লাইব্রেরী অফ কংরেস এই মুভিটিকে সামাজিক ও ঐতিহাসিকভাবে আলাদা গুরুত্ব দিয়েছে।

এই মুভি সম্পর্কে টাইম ম্যগাজিনের বিখ্যাত উক্তিঃ

“Treasure of Sierra Madre is one of the best things Hollywood has done since it learned to talk; and the movie can take a place, without blushing, among the best ever mad
 
পরিচালকঃ ফ্র্যাঙ্ক ডারাবন্ট

অভিনয়ঃ টিম রবিন্স, মরগ্যান ফ্রিম্যান, বব গানটন, জেমস হোয়াইটমোর।
IMDB: 9.3

“Fear can hold you prisoner. Hope can set you free”

আমি আজও জানি না সেদিন দুই ইতালিয়ান গায়িকা কি বিষয়ে গেয়ে যাচ্ছিলেন। সত্যি কথা বলতে আমি জানতেও চাই না। কিছু কথা অব্যাক্ত থাকায় শ্রেয়। আমি এটা ভেবেই খুশী হই যে তারা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না এমন সুন্দর কিছুই গেয়ে যাচ্ছিলেন। অপ্রকাশের যন্ত্রনা হৃদয়ে সুখকর ব্যাথার সৃষ্টি করে। এই ধুসর কারাগারে আটকে থাকা কষ্টের চেয়েও সেদিনের সেই কন্ঠ অনেক বেশী কষ্টকর, অনেক বেশী যন্ত্রনার আর দীর্ঘ ছিলো। এত বেশী তিক্ত যা কেউ কল্পনা করতেও ভয় পাবে। যেন একটা সুন্দর ছটফটে পাখি এই একঘেয়ে খাচাতে এসে আটকে গেছে আর তার চিরচেনা দেয়ালগুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই যন্ত্রনাদায়ক কন্ঠের কারনেই শশাঙ্কের প্রতিটি মানুষ সেদিন নিজেকে কিছু সময়ের জন্য হলেও মুক্ত মনে করেছিলো”

হতাশাগ্রস্থ জীবন, মুক্তির স্বপ্ন আর আত্মার স্বাধীনতা - ফ্রাঙ্ক ডারাবণ্ট পরিচালিত দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান” মুভির মুলমন্ত্র। না... এই মাপের মুভি নিয়ে লেখার মত যোগ্যতা আমার নেই; শুধুমাত্র ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। আমার আগে বহু চলচ্চিত্র বোদ্ধা তাদের তুখোর লেখনী এবং মেধার সাহায্যে শশাঙ্কের কারাগার সম্পর্কে লিখেছেন এবং ভবিষ্যৎ এ আরো লিখবেন। আসলে কিছু কিছু বিষয়’ই আছে এমন যা শুধু ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। ‘শশাঙ্ক রিডেম্পশান’ এমন’ই কিছু একটা। মুভি নিয়ে যাদের ই নুন্যতম লেখালেখি করার অভ্যাস আছে তাদের’ই অতি পছন্দের বিষয় চলচ্চিত্র জগতের এই মুকুটহীন সম্রাট কে নিয়ে কলম ধরা। মুকুটহীন সম্রাট’ই বটে; না আছে কোনো অস্কার, না আছে গোল্ডেন গ্লোব। দুর্ভাগ্য’ই বলা চলে। “ফরেষ্ট গাম্প” আরা “পাল্প ফিকশান” জিততে দেয় নি ৬৭ তম অস্কার। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট এর ক্রিটিকেরাও মুভিটিকে ৭২ তম পজিশানে রেখেছে সেরা ১০০ এর মধ্যে। কিন্তু জনগনের ভালোবাসা কিভাবে দূরে রাখবে? তাদের ভোটে এখনো বিশ্বের সেরা মুভি দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান”। হয়তো সারাজীবন’ই থাকবে কারন মুভিতেই তো বলা হয়েছে ভালো কোনোকিছুর’ই মৃত্যু নাই

মুভির কাহিনী না বলাই শ্রেয়। তবু যারা এখনো এই দূর্লভ মুগ্ধতাতে নিজেকে সিক্ত করেননি তাদের উদ্দেশ্যে দু’টো কথা বলি। ১৯৪৭ এ ব্যাংকার এ্যান্ডি ডুফ্রেন্স (টিম রবিন্স)  এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে তার স্ত্রীকে এবং তার স্ত্রীর প্রেমিক কে খুন করার। উকিলের সামনে অভিযোগ প্রমানে ব্যার্থ হওয়াতে তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। পাঠিয়ে দেয়া হয় শশাঙ্কের কারাগারে। গুয়ান্তানামো কারাগারের নাম শুনেছি আমরা; শশাঙ্কের কারাগার যেন গুয়ান্তানামোর’ই প্রতিরূপ। ওয়ার্ডেন নর্টন (বব গুনটন) মানুষরূপী নরপিশাচ। তার ডানহাত ক্যাপ্টেন হ্যাডলি (ক্ল্যান্সি ব্রাউন)। সাথে যুক্ত হয়েছে হে-উড এর পাশবিক লালসা এবং তার গ্যাং। এত কিছুর ভিড়েও এ্যান্ডি খুজে পায় এক অমুল্য রত্ন; ‘রেড’কে (মর্গান ফ্রিম্যান)। তার সাহায্যে একটি পাথর খোদাই করার হাতুরিও পায় এ্যান্ডি। কিন্তু কি করবে সে এই হাতুরি দিয়ে? রেড তো আগেই তাকে বলে দিয়েছে কারাগারের পাথুরে দেয়াল খোদায় করতে ৬০০ বছর লেগে যাবে। যারা দেখেন নি মুভিটা তাদের জন্য এইখানে দাঁড়ি দেই; নইলে পরে আমাকে বকবেন।

নরকের প্রতিও মানুষের ভালোবাসা জন্মে; এই কারাগার থেকে যখন কেউ ছাড়া পায় তখন সে বড্ড একা হয়ে যায়। ব্রুক্স যখন ৫০ বছর পরে এই নরক থেকে প্যারোলে ছাড়া পেলো সে একটি চিঠি লিখে রেড কে। চিঠিটা বাংলাতে লেখার লোভ সামলাতে পারছি নাঃ

  বন্ধুরা, বহিঃবিশ্ব যে এতটা গতিময় তা বিশ্বাস হতে চায় না। যখন ছোট্ট ছিলাম, তখন একবার একটা গাড়ি দেখেছিলাম আমি। কিন্তু এখন... গাড়িতে ভরে গিয়েছে শহর। পুরো পৃথিবীটাই যেন অনেক ব্যাস্ত। প্যারোল বোর্ড আমাকে যে বাড়িতে থাকার জায়গা দিয়েছে তার নাম ‘ব্রিউয়ার’। একটি চাকরীও দিয়েছে সাথে গ্রোসারীতে পন্য ব্যাগে ভরে দেবার। কঠিন কাজ, তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু জানো তো বয়স হয়েছে; হাত প্রায়শই ধরে আসে। ম্যানেজার আমাকে খুব একটা পছন্দ করে বলেও মনে হয় না বৃদ্ধ বলে। কাজ শেষে মাঝে মাঝে পার্কে যাই পাখিদের খাওয়াতে। আর ভাবি ‘জেড’ (পোষা কাক) আকাশে উড়তে উড়তে কোনোদিন আমাকে খুজে পাবে। সে যেখানেই থাকুক, আশা করি ভাল আছে আর নতুন অনেক বন্ধুও জুটিয়েছে। রাতে ঘুম আসে না আমার; ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখে জেগে উঠি। মাঝে মাঝে ভুলে যাই কোথাই আছি। ইচ্ছে করে একটা পিস্তল জোগার করে দোকানে ডাকাতি করি যাতে তারা আমাকে আবার আমার বাসাতে ফেরত পাঠায়। সাথে যদি ম্যানেজারকেউ খুন করতে পারতাম! কিন্তু বড় বেশি বৃদ্ধ হয়ে গেছি আমি এমন কাজ করতে। এখানে থাকতে ইচ্ছে করে না, সব সময় ভয় পেতে পেতে আমি ক্লান্ত। ঠিক করেছি... আর থাকব না। মনে হয় না কারো কিছু এসে যাবে এই বুড়ো মানুষটার জন্য”

এ্যান্ডির স্বপ্ন শেষ হয় না। যখন সে ছাড়া পাবে এখান থেকে , চলে যাবে প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে মেক্সিকোর এক উষ্ণ সৈকতে যে কোনো স্মৃতি ধরে রাখে না। রেড এখন আর কোনো স্বপ্ন দেখে না। তার পুরো পৃথিবী’ই এই কারাগার। তবে সে হতাশ নয়; এটা টের পাওয়া যায় তার প্রতিটি কথাতেঃ

এই কারাগারের দেয়ালগুলো বড় আজব। প্রথমে ঘৃনা করে শেখাবে, তারপর অভ্যাসে পরিনত করবে। একসময় তুমি কখন নির্ভর করতে শুরু করবে নিজেও জানো না। আর একেই বলে মানিয়ে নেয়া”

মুভিতে অভিনয় নিয়ে সমালোচনা করার প্রশ্নই আসে না। মর্গান ফ্রিম্যানের ন্যারেশান মুগ্ধ হয়ে শুনেছি; প্রতিটি কথা মনে রাখার মত। মুক্তির ২০ বছর পরেও মানুষকে ভালোবাসায় সিক্ত করে আসছে “দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান”। ক্লাসিক এই মুভির পরিচালক ফ্র্যাঙ্ক ডারাবন্ট এবং মূল বইয়ের লেখক স্টিফেন কিং এর জুটি এর পরেও গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে মানুষের কাছে “দ্যা গ্রিন মাইল”, “দ্যা মিষ্ট” এবং “দ্যা ওয়াকিং ডেড” এ।

কিছু ফ্যাক্টসঃ

  • এ্যান্ডি চরিত্রটি টম হ্যাংকস্‌ কে লক্ষ করে তৈরী করা হয়েছিলো। কাজ ও শুরু করেছলেন টম। কিন্তু “ফরেষ্ট গাম্প” মুভির জন্য কাজটি ছেড়ে দেন তিনি।
  • স্টিফেন কিং তার বই এর স্বত্ব বিক্রি করেছিলেন মাত্র এক ডলারে। পরে অবশ্য তাকে উপযুক্ত অর্থ প্রদান করা হয়।
  • মুভির প্রথমে এ্যান্ডি আর রেড কে বেসবল বল নিয়ে খেলতে দেখা যায়। এই শূটিং টি ৯ ঘন্টা ধরে করা হয় এবং পরেরদিন মর্গান ফ্রিম্যান তার হাত স্লিং এ ঝুলিয়ে শুটিং এ আসেন।
  • মুভিটি মুক্তি পাবার পরে বক্স অফিসে মুখ থুবরে পরে। এর তিন লক্ষ বিশ হাজার কপি নষ্ট হয়ে যাবার ভয় দেখা দেয়। অথচ পরে ১৯৯৫ সালের সবচাইতে বেশী ভাড়া হওয়া মুভিতে পরিনত হয়।
  • পরিচালক ফ্র্যাঙ্ক ডারাবন্ট এই মুভির কোনো ডিরেক্টরস্‌ কাট বের করেন নি কারন তিনি নিজেই ভীষন লজ্জিত কেটে ফেলা অংশগুলো দেখে।
  • এই মুভির ইটালিয়ান নাম “Le ali della libertà” যার ইংরেজি “The Wings of Freedom”.
  • টমি উইলিয়ামস চরিত্রের জন্য ব্র্যাড পিটকে পছন্দ করা হয়েছিলো প্রথমে।
  • প্যারোল পেপারে তরুন রেড হিসেবে যাকে দেখানো হয়েছে সে আসলে মর্গান ফ্রিম্যানের ছেলে আলফান্সো ফ্রিম্যান।
  • এ্যান্ডি হামাগুরি দিয়ে নোংরা যে পাইপ দিয়ে বের হয় সেটার থিকথিকা পদার্থ আসলে চকলেট সিরাপ দিয়ে তৈরী। মজার বিষয় হলো কেউ যদি শশাঙ্কের সেট এ যায় সে এখনো নাকি চকলেটের গন্ধ পায়।
পরিশেষে অতি প্রিয় একটি সংলাপ যা এ্যান্ডি রেডকে উদ্দেশ্য করে বলেঃ

“Remember, Red, hope is a good thing, maybe the best of things. And no good thing ever dies.”

 
পরিচালকঃ ফ্লোরিয়ান হ্যাকেল ভন ডোনার্সমার্ক

অভিনয়ঃ মার্টিনা জেডেক, সেবাস্তিয়ান কোচ, উলরিচ মোহ।
IMDB: 8.5

“Before the fall of the Berlin Wall, East Germany's Secret Police Listened to Your Secrets”

২০০৬ সালে ৭৯ তম অস্কার এবং ৬৪ তম গোল্ডেন গ্লোব এওয়ার্ডে বেষ্ট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম হিসেবে পুরস্কার পাওয়া “দ্যা লাইভস্‌ অফ আদারস্‌” জার্মান পরিচালক ফ্লোরিয়ান হ্যাকেল ভন ডোনার্সমার্কের প্রথম পরিচালিত মুভি। ১৩৭ মিনিটের টানটান উত্তেজনাকর থ্রিলার মুভিটি জার্মান ফিল্ম এওয়ার্ডে ১১ টি শাখায় নমিনেশান ও ৭ টি শাখায় জয় পায় যা এখন অবধি রেকর্ড হিসেবেই আছে। পূর্ব জার্মানির সমাজতান্ত্রিক পটভূমিতে নির্মিত মুভিটি মূলত মানুষের বাক-স্বাধীনতা হরনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর গল্প। বার্লিন দেয়াল ভাঙ্গার ১৭ বছর পরে মুভিটি তৈরী; কিন্তু এটিই এই বিষয়ের উপরে নির্মিত প্রথম সিরিয়াস টাইপের মুভি। IMBD এর সেরা ২৫০ এর মধ্যে এই মুভির অবস্থান ৬০ তম হলেও আমার দেখে সেরা ১০ টি মুভির মধ্যে থাকবে “দ্যা লাইভস্‌ অফ আদারস্‌”।

একবার ভাবুন তো; আপনার ঘরের প্রতিটি কোনাতে মাইক্রফোন লাগানো, আপনি কার সাথে কি কথা বলছেন তার পুরোটাই সরাসরি শুনছে অন্য কেউ কিংবা আপনি বাসার বাইরে পা দেয়া মাত্রই আপনার পেছনে ফেউ লেগে যাচ্ছে।। এমনকি আপনার চরম ব্যাক্তিগত বিষয়’ও উচ্চস্তর থেকে পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে... কেমন হবে বিষয়টা? ঠিক এমনটি’ই ঘটেছে গ্রেগ ড্রেম্যান (সেবাস্তিয়ান কোচ) ও তার স্ত্রী ক্রিস্টিয়া স্যীল্যান্ড (মার্টিনা জেডেক) এর জীবনে। ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব জার্মানির (Germar Democratic Republic বা সংক্ষেপে GDR)  ক্ষমতাতে ছিলো ‘stasi’ নামের এক গুপ্ত পুলিশ বাহিনী। ১৯৯০ সালের অক্টবারে GDR এর পতনের সাথে সাথে তাদের ক্ষমতাও চলে যায়। এই stasi কে পৃথিবীর সবচাইতে কার্জকর এবং সবচাইতে ভয়ংকর সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স হিসেবে এখনো মনে করা হয়। তাদের কাজই ছিলো নুন্যতম সন্দেহভাজনদের’ও চোখে চোখে রাখা এবং ভিন্ন মতাদর্শের মানুষদের খুজে বের করে অমানবিক অত্যাচার করে মারা। এই stasi এর এক এজেন্ট জার্ড উইস্লার (উলরিচ মোহ)। তার দায়িত্ত্ব পরে গ্রেগ ড্রেম্যান এর উপরে নজর রাখা। চরম দায়িত্ত্ববান মানুষ এই উইস্লার; সমাজতান্ত্রিক আদর্শের অন্ধ ভক্ত। সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে সে এতটাই ভয়ঙ্কর যে বলা হয় তার নজরদারিতে আসলে ভালো মানুষের’ও রক্ষা নাই। আস্তে আস্তে নজরদারির মাধ্যমে সে ঢুকে পড়ে ড্রেম্যান এর জীবনে। অত্যান্ত প্রতিভাবান লেখক এই ড্রেম্যান; সরকার বিরোধী যেকোনো কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। কিন্তু আসলেই কি তাই? দায়িত্ত্ব এবং নৈতিকতার মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। আর এখানেই মূল কাহিনির শুরু।

যাই হোক; এই মুভির কাহিনী এমন’ই যে দুই লাইনেই পুরোটা বলে দেয়া সম্ভব। কিন্তু তাতে আর মুভি দেখার দরকার হবে না। সেবাস্তিয়ান কোভের অভিনয় আমার এতটাই প্রিয় যে তার প্রতিটি মুভি আমি কালেকশান করার চেষ্টা করেছি। এখানেও তার ব্যাতিক্রম নয়। মার্টিনা জেডেক ৪৮ বছর বয়সেও এত আকর্ষনীয় কিভাবে তা চিন্তা করেছি বহু বার। আর উলরিচ মোহকে ছাড়া উইস্লার চরিত্র কোনভাবেই মনে হয় ফুটে উঠত না। ঠান্ডা মাথাতে দেখতে হবে এই মুভি; এটা কোনো ওয়ার বা এ্যাকশান মুভি না, একেবারে ঠান্ডা থ্রিলার বা ড্রামা। তবে টেনশানে ফেলে দেবে অনেক জায়গাতেই।  জার্মান মুভির প্রতি কেন জানি দিনে দিনে খুব বেশী পরিমানে আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি; অসম্ভব ভালো লাগে এদের চিত্রনাট্যগুলো। মনে পড়ে না “দ্যা লাইভস্‌ অফ আদারস্‌” দেখে কেউ কোনো নেগেটিভ কমেন্ট করেছে; যদি না দেখা হয়ে থাকে তবে বলব অনেক বেশী দেরি করে ফেলেছেন। সুতরাং আর দেরি না করে ঘুরে আসুন ১৯৮৪ সালের পূর্ব জার্মানি থেকে।


আরেকটি কথা; ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারন জার্মান নামগুলোর বাংলা উচ্চারন সঠিকভাবে করতে পেরেছি কি না তা আমি নিশ্চিত নই।